ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

যে উপায়ে শীতে চুলের খুশকি দূর করবেন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
প্রতীকী ছবি।

ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে অনেকেরই খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়। সাধারণ ধারণার বিপরীতে, এই সমস্যার পেছনে শুধু শুষ্কতা নয়, নানা কারণ কাজ করে। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকার কারণে চামড়া ফেটে মরা চামড়া মাথায় উঠে। যখন এই মরা চামড়া আঁশের মতো চুলের মধ্যে ধরা পড়ে, তখনই তাকে খুশকি বলা হয়।

চীন প্রবাসী ভারতীয় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জিলপা শেইখ বলেন, শীতকালে খুশকি হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শুষ্ক মাথার ত্বক সাধারণত বেশি তেল উৎপন্ন করে, যা খুশকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া শীতকালে উলের টুপি বা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখার কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, আর কিছু অনুজীব এই তাপমাত্রায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কম ধোয়া চুলে তেল ও ময়লা জমে খুশকির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণও খুশকি বাড়াতে পারে।

শীতকালে কম পানি পান করা ও ঘরের ভিতরের শুষ্ক বাতাসও ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে খুশকির সমস্যা তৈরি করে। চুল সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার ও আয়রনসের অতিমাত্রায় ব্যবহারও এক ধরনের কারণ হতে পারে।

খুশকি প্রতিরোধের উপায়

খুশকি প্রতিরোধের মূল উপায় হল মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা। খুশকি দেখা দিলে বিশেষ ‘ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু’ ব্যবহার করতে পারেন। তবে সব শ্যাম্পুর কার্যকারিতা একরকম নয়।

ডা. শেইখ জানিয়েছেন, খুশকি নিরাময়ে ব্যবহৃত প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে কোল টার প্রিপারেশন, পাইরিথিয়াম জিঙ্ক, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও সালফার, সেলেনিয়াম সালফাইড এবং কোনোটকোনাজোল। এগুলো মরা চামড়া কমাতে, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় মাথায় ভালোভাবে মেখে পাঁচ মিনিট রাখা উচিত, তারপর ভালোভাবে ধুতে হবে। তৈলাক্ত চুল বা স্ট্রেইট চুলে সপ্তাহে দু’বার, কোঁকড়া চুলে সপ্তাহে একবার যথেষ্ট। শুধু মাথার ত্বকে ব্যবহার করা উচিত।

ঘরোয়া সমাধান

ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ছাড়া কিছু প্রাকৃতিক উপাদানও খুশকি কমাতে কার্যকর। নারিকেল তেল, অ্যালো ভেরা জেল, অ্যাপল সাইডার ভিনেগার, অ্যাসপিরিন, বেকিং সোডা, লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল মাথার ত্বকে মাখলে খুশকি কমতে সাহায্য করে। তবে এগুলো ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা জরুরি, যেমন বেকিং সোডা অতিরিক্ত ব্যবহারে চুল ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তিনটি প্রাকৃতিক উপাদান

১. নারকেল তেল ও পেঁয়াজের রস: নারকেল তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নারকেল তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতা আরও অনেকাংশে বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিটি করতে প্রথমে ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস এবং ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি নিয়ে ভালো করে স্কাল্পে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ১ ঘণ্টা রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এই প্রক্রিয়াটি সপ্তাহে এক দিন করুন।

২. অলিভ অয়েল ও পেঁয়াজের রস: খুশকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী। আর পেঁয়াজের রস চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়াটি করতে প্রথমে ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস এবং দেড় টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর ওই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে বৃত্তাকার গতিতে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। ২ ঘণ্টার মতো রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এই প্রক্রিয়াটিও সপ্তাহে এক দিন করতে পারেন।

৩. নিমের রস, অলিভ ও নারকেল তেল: নিমের অ্যান্টিফাঙাল উপাদানে স্কাল্পের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে। তাই খুশকির বিরুদ্ধে নিম কঠিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। খুশকি দূর করতে সপ্তাহে তিন দিন স্কাল্পে ৪ চামচ নিমপাতার রস, ৩ চামচ অলিভ ও নারকেল তেল মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করুন। স্কাল্পে ও চুলের গোড়ায় যেন এই মিশ্রণ পৌঁছায়। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।