রাজধানীসহ সারা দেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এই ভূমিকম্পে সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বেশ কিছু ভবন হেলে পড়ার খবর এসেছে, এমনকি একটি ভবন ধসে পড়েছে। এদিকে, এই খবরে রাজধানীর রাস্তায় জনসাধারণের ভিড় দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৩ শতাধিক হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০.৩৮ মিনিটের দিকে রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে।
ভূমিকম্পে রাজধানীর বংশালে একটি বিল্ডিংয়ের রেলিং ভেঙে পড়ে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ করে পঞ্চম তলা বিল্ডিংয়ের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন পথচারী ঘটনাস্থলে নিহত হন। নিহতরা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রেলিং পড়ে নিহতদের রক্তাক্ত দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। আশেপাশের কয়েকজন লোক দৌড়ে এসে তাদের উদ্ধার করছেন। অন্তত একজনের মুখ ও মাথার সামনের অংশ থেতলে গেছে।
এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেওয়াল চাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছে। নিহত ফাতেমা ছিলেন গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার আব্দুল হকের কন্যা।
জানা যায়, সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যা মুহূর্তেই ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে হঠাৎ ভূমিকম্পের সময় সড়কের পাশে থাকা দেওয়াল নবজাতক ফাতেমা, তার মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগমের ওপর ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ফাতেমার মৃত্যু হয়। পরে তাদের দেওয়ালের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। আহত মা ও প্রতিবেশীকে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই উপজেলার মালিতা প্রামের কাজম আলী (৪০) নামে এক বৃদ্ধ মাটির ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন। এ ছাড়াও ভূমিকম্পের সময় দৌড়ে বের হওয়ায় প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলাশ থানার ওসি মনির হোসেন।
ভূমিকম্পের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরমানিটোলা কসাইটুলিতে একটি আটতলা ভবনের পলেস্তারার কিছু অংশ ও ইট খসে পড়েছে। তবে সেখানে হতাহত কেউ হয়নি। খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী দোতলা ভবনে একটি ইট পড়ে একজন আহত হয়েছে।
বারিধারার ব্লক-এফ, রোড-৫ এবং মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় কিছু স্থানে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপন কাজ করছে। তবে অগ্নিকাণ্ড ভূমিকম্পজনিত কি না তা নিশ্চিত নয়।
সূত্রাপুরের স্বামীবাগ ও কলাবাগানের আবেদখালী রোডে যথাক্রমে আটতলা ও সাততলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে কোনো হতাহতের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পটি রাজধানীর পাশাপাশি চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, বগুড়া, বরিশাল, মৌলভীবাজার ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় অনুভূত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ভারতেও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

