ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

নির্বাচন করবেন আসিফ, অনিশ্চিত মাহফুজ 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। এমন পরিস্থিতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ করে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেবেন, নাকি সরকারে থেকে যাবেন—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া নির্বাচনে অংশগ্রহনের কথা জানালেও মাহফুজ আলম এ নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

পদত্যাগ ও নির্বাচন করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে রোববার (৩০ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। অন্যদিকে ঢাকা থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা আগেই জানিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তবে তিনি বিএনপি, গণআধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), নাকি স্বতন্ত্র কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন তা স্পষ্ট করেননি। 

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে পদত্যাগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তাদের পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তখন তারা সময় চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

তবে আসিফ মাহমুদের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন তিনি। তবে মাহফুজ আলমের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র ভিন্ন ভিন্ন কথা তথ্য দিয়েছেন।

কেউ কেউ বলছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদে থেকে যাবেন।

অন্যদিকে আবার কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী তপশিলের আগেই সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। অন্যদিকে মাহফুজ আলম যদি নির্বাচন করেন, সে ক্ষেত্রে তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।

বিএনপি এখনো ঢাকা-১০ ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। সেটি সরকারের এ দুই তরুণ উপদেষ্টার জন্যই কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জামায়াত এ দুই আসনেই প্রার্থী দিয়েছে।

এদিকে, গত ৯ নভেম্বর আসিফ মাহমুদ কুমিল্লা মুরাদনগরের পরিবর্তে ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেন।

এ দিন আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ঢাকা থেকে নির্বাচন করবেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে কবে পদত্যাগ করবেন সেটা নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

আসিফ মাহমুদ বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান বলেও আলোচনা আছে অনেক দিন ধরে। তিনি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করবেন, নাকি সরাসরি এনসিপি থেকে ভোট করবেন—এ নিয়ে ৯ নভেম্বর সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন। তখন আসিফ মাহমুদ বলেন, তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন। তবে এটাও বলেছিলেন, ‘তারপর দেখা যাক।’

এর আগে ১ নভেম্বর এনসিপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে আসিফ মাহমুদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে রাখা হয়নি। এরপর থেকে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনসিপি ও দলটির শীর্ষ নেতাদের কারও কারও সমালোচনায় সোচ্চার দেখা যাচ্ছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিল করেন আসিফ মাহমুদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কেরা। এর আগে গত ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আসিফের সমর্থকেরা।

ঢাকায় আসিফ মাহমুদের সম্ভাব্য নির্বাচনি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না করা, তার সমর্থকদের মুখে এনসিপির সমালোচনা করা এবং বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল মনে হতে পারে, এমন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা—এসব বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই মনে করছেন, আসিফ মাহমুদ বিএনপি থেকে ভোট করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।

এদিকে, গণঅধিকার পরিষদের হয়ে নির্বাচনে আসিফ মাহমুদ অংশগ্রহণ  করতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

এ বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানান, আসিফ মাহমুদ বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে পারেন। আবার স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু এনসিপিতে তার যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

অন্যদিকে, মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার (লক্ষ্মীপুর-১ আসন) ভোটার। এ আসনে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি আগে থেকেই এলাকায় সক্রিয়।

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মাহফুজ আলম প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা এলাকায় অনেক দিন ধরেই চলছে। তার ভাই এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমও এলাকায় নির্বাচন নিয়ে বেশ সক্রিয়।

মাহবুব আলম বলেন, মাহফুজ সরকার থেকে পদত্যাগের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। কিন্তু তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।