বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম

স্মরণে-বরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। ছবি- সংগৃহীত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। ছবি- সংগৃহীত

আগামীকাল ২৯ মে ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’।  এই দিনে আমরা পরম ভালোবাসায় স্মরণ করি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজি রেখে নিযুক্ত শান্তিরক্ষীদের। এই যাত্রায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।  দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ করে শান্তির প্রতি বাংলাদেশ নিজেদের অঙ্গীকার প্রমাণ করেছে, আর এ কারণেই  আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা অর্জন করেছি শান্তি পতাকা বহনের ভাবমূর্তি।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় সেনাবাহিনী থেকে গিয়ে ‘নীল হেলমেট’ পরে ভূমিকা রাখা প্রায় ৬০,০০০ জনের মধ্যে এককভাবে বাংলাদেশের ৬,৯২৪ জন কর্মকর্তা এবং সৈনিক ১১টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে ১২টি দেশ/অবস্থানে মোতায়েন রয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘের নেতৃত্বে শান্তি রক্ষায় একটি প্রধানতম অবদানকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

ইতিহাস বলে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১৯৮৮ সাল থেকে অবদান রাখা শুরু করে। এরপর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন সংকটপূর্ণ অঞ্চল, যেমন কঙ্গো, দারফুর, লিবারিয়া, হাইতি, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান, মালিতে সহ আরও অনেক দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী সদস্যরা কঠিন পরিবেশে কাজ করার সময় মানবিকতার মহত্ব বজায় রেখে সংহতি, বন্ধুত্ব ও নিরাপত্তার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই অবদানের জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রশংসায় ‘শান্তির কূটনীতির মোরসাল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর নারী সদস্যরাও শান্তিরক্ষী হিসেবে গৌরবের সাথে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। ২০১৪ সালে  প্রথম দুইজন নারী পাইলট শান্তি মিশনে যোগ দেন।

প্রসঙ্গত, ২৯ মে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন বিশ্বে সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তি আনয়নের প্রস্তাব ৫৭/১২৯- অনুযায়ী ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই তারিখটি স্মরণীয়, কারণ ১৯৪৮ সালে এই দিনেই ফিলিস্তিনে ‘জাতিসংঘ সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা’ (United Nations Truce Supervision Organization বা UNTSO) নামে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযান শুরু হয়।  

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সৈন্যরা শুধুমাত্র যুদ্ধবিগ্রহের স্থগিতাদেশ রক্ষা বা সংঘাতপ্রতিরোধেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা স্থানীয় জনগণের কল্যাণ, পুনর্গঠন এবং পুনর্বাসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা স্কুল নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, শিশুদের শিক্ষা প্রসার ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিয়ে থাকে। এসব কার্যক্রম শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তার বোধ বৃদ্ধি করে। এইভাবে, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী কেবল অস্ত্রধারী সৈন্য নয়, তারা মানবতার সৈনিক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।

বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অত্যন্ত ইতিবাচক ও দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রদান করছেন। তার অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ আরও শক্তিশালী ও সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নজর দিয়েছেন, যা তাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন নিশ্চিত করছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামরিক কূটনীতির প্রতি তার সবিশেষ  মনোযোগ বাংলাদেশের জন্যে বিশ্বে মর্যাদা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়েছে।

বিশ্বে শান্তি সুরক্ষার এই সুদীর্ঘ পথে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ফলে কেবল সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়নি, বরং বাংলাদেশের কূটনৈতিক শক্তি ও মানবিক ভাবমূর্তিও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম, এবং সেইসাথে পূর্বতন থেকে বর্তমান সেনাপ্রধানের যোগ্য নেতৃত্ব প্রশংসার দাবিদার।

তবে শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জও কম নয়। বিপজ্জনক পরিবেশ, বিভন্ন দেশে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হুমকি এবং সীমিত সম্পদের মধ্যে কাজ করতে হয় শান্তিরক্ষীদের। সেইসঙ্গে, স্থানীয় জনগণের সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মীয় ভাবাবেগের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়, সম্মান প্রদর্শন করতে হয়। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতা ও সহনশীলতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অমোন হুমকি মোকাবেলা করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযান প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সহিংসতা, দুর্ঘটনা ও রোগের কারণে প্রায় ৩৮০০ জন সামরিক, পুলিশ ও সাধারণ কর্মী শান্তির জন্য প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা হারিয়েছি ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। 

নামিবিয়ায় (UNTAG) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ ফয়জুল করিম ১৯৮৯ সালে উইন্ডহোক, নামিবিয়ায় মৃত্যু বরণ করেন। তিনি বিদেশে শান্তিরক্ষী মিশনে নিহত প্রথম বাংলাদেশি কর্মকর্তা ছিলেন। ১২৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে পরবর্তীতে ‘ড্যাগ হামারস্কজলড মেডেল’ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।

শান্তি তো সবখানেই দরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন, তেমনি করে নিজের দেশেও। সেই দর্শনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নেতৃত্বে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শান্তি প্রক্রিয়াও আমাদের সেনাবাহিনী দৃঢ়ভাবে কাজ করছে।  তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী হলো দেশের মানুষের আস্থা ও আশা, এবং আমাদের কাজ হলো সেই বিশ্বাস পূরণ করা।’

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নত করার পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধকেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার জন্যে সেনাবাহিনীকে  উদ্বুদ্ধ করে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার এই দৃপ্ত পদক্ষেপে দেশে চলমান ক্রান্তিকালে সকল নাগরিক সামরিক বাহিনীর পাশে আজ প্রতিজ্ঞায় ঐক্যবদ্ধ।

সর্বশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যে অবদান রেখে চলেছে তা কেবল দেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তাদের আত্মত্যাগ ও পেশাদারিত্বের কারণে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!