বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আমিরুল হাছান

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০১:১৯ পিএম

অহংকার বা আমিত্ব

আমিরুল হাছান

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০১:১৯ পিএম

মিসরের সপ্তম প্লেগ: ব্রিটিশ শিল্পী জন মার্টিনের আঁকা একটি ঐতিহাসিক তৈলচিত্র।        ছবি- সংগৃহীত

মিসরের সপ্তম প্লেগ: ব্রিটিশ শিল্পী জন মার্টিনের আঁকা একটি ঐতিহাসিক তৈলচিত্র। ছবি- সংগৃহীত

অহংকারকে আরবিতে বলা হয় উম্মুল আমরাজ। অর্থ- সকল পাপের জননী। অহংকারীরা সবরকম পাপ করতে পারে। অহংকার মূলত ইবলিস শয়তানের বৈশিষ্ট্য। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ধাপের কতগুলো পাপের মাঝে অহংকার কঠিন পাপের অংশ। আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর তাকে সেজদা করার জন্য আল্লাহ তায়ালা যখন সবাইকে আদেশ করেন, তখন ফেরেশতারা সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন কিন্তু ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা ইবলিস অস্বীকার করে বসল। সে আগুনের তৈরি বলে অহংকার করল।

পবিত্র কোরআনের ভাষায়, সে অস্বীকৃতি জানাল এবং অহংকার করল। আর সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা বাকারা: ৩৪)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন,ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমারই পোশাক এবং গর্ব-অহংকার হচ্ছে আমারই চাদর।

আত্মগৌরব করা শুধু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হাদিস কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে টানাটানি করে, আমি তাকে আজাবে নিক্ষেপ করি। (আবু দাউদ: ৪০৯০)।

আদি যুগ থেকে অদ‍্যপর্যন্ত মানুষের একটি মারাত্মক ব্যধি ‘অহংকার’। অহংকার করে জেনেও কোনো ব্যক্তিই অহংকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না। এটি এমন এক মারাত্মক মানসিক ও চারিত্রিক রোগ; যার পরিণাম খুবই ভয়াবহ এবং ভয়ংকর। যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতেও যেতে পারবে না।

অহংকার আরবি ‘কিবরু’র প্রতিশব্দ। হাদিসের পরিভাষায় অহংকার হলো-সত্যকে অস্বীকার করা; মানুষকে হেয় করা। নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় জানা এবং অন্যকে তুচ্ছ-নিকৃষ্ট মনে করাই অহংকার।

আমরা আকাশ জমিনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই অহংকারীদের ভেতর শীর্ষে আছে ইবলিস। ইবলিস শয়তান বলেছিল, আদমের চেয়ে আমার শ্রেষ্ঠত্ব বেশি। আল্লাহ বললেন, অহংকার করা তোমার উচিত নয়, যাও লাঞ্ছিত হয়ে বের হয়ে যাও এখান থেকে। (সুরা আরাফ)

মানুষের ভেতর অহংকারী ছিল নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেল। অহংকারে ফেরাউন বলেছিল, আমি তোমাদের বড় রব। নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাবসহ পৃথিবীর আরও অসংখ্য লোক দম্ভভরে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এর বিপরীতে বিনয়ী ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব মনীষীরা। হজরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে আখেরি পয়গম্বর পর্যন্ত সব নবী রাসুল অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। সাহাবি তাবেয়ি ও আল্লাহর অলি আউলিয়াগণ সবাই বিনয়ের চর্চা করতেন। বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিতেন। কাউকে কষ্ট বা অহংকার করে কথা বলতেন না। অহংকার থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতেন।

মহাবিশ্বের গবেষণার গবেষণায় বর্তমান পৃথিবীতে কতকিছুই জানতে এবং বুঝতে চায় মানুষ। তারপরও মহাবিশ্বের মাঝে আমরা শুধুমাত্র সৌরজগতের মাঝে বিদ‍্যমান গ্রহগুলো নিয়ে গবেষণা করে ভূগোলকে আধুনিকায়ন করতে চাই। একটু ভেবে দেখবেন আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা কতকিছু সৃষ্টি করেছেন কেবল মাত্র এই পৃথিবী নামক গ্রহের ভারসাম‍্য নয়, গোটা মহাবিশ্বের ভারসাম্য বজায় রাখার জন‍্য।

পৃথিবী নামক গ্রহটি সূর্যের চারপাশে সেকেন্ডে ৩০ কিমি গতিতে ঘুরছে তার সৃষ্টির সৃষ্টত সময় থেকে নিয়ম অনুযায়ী এবং অন‍্যান‍্য সমস্ত গ্রহ নিজকক্ষে সৃষ্টিকর্তার বিধান নিয়মানুযায়ী আবর্তিত রয়েছে। এই সময় থেকে চালিয়ে নিয়ে নিচ্ছেন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির ভেতরের রহস‍্য। তাই একমাত্র মহাবিশ্বের মালিক স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন অহংকার শব্দের ঘোষণাদার।

নিয়মকে শুধু অনিয়ম করি আমরা মানুষ নামের আদম প্রাণী। প্রত্যেক ধর্মের মতভিন্নতার ভেতরেও মানুষের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার কথা আমরা না ভেবে নিজেকেই বড় মনে করে চলি, এই চলাটাই পতনের মূল অংশীদার। যা হোক অহংকার এবং হেদায়েত আল্লাহ্ নিজের হাতে রেখেছেন। কোনো ধর্মের যাজককে এই ক্ষমতা অর্পণ করেননি। তাই মানুষের তরে মানুষের ভালোবাসাকেই সম্মত সম্মান মান‍্য করাই বিবেকের কাজ এবং একজন ভালো মানুষের লক্ষ্ণণ।

অহংকার আমরা নিজেরা না করি নিজেকে বড় মনে না করি। নিজের কর্ম নিজের সম্মানকে নিজে শ্রদ্ধা করি। পদ-পদবির অহংকার দাম্ভিকতাকে পরিহার করি। মনে রাখতে হবে মন জন ধন কিছুই থাকে না জীবনে অহংকার পরিহার করে নিজেকে যার যার ধর্মের আলোতে আপন মনে লালন করে কর্মকে বর্ণ বানিয়ে রেখে যাই। তবেই একজন মানুষ হওয়ার আত্মতৃপ্তি পাওয়া যাবে।

কবি কাজী নজরুল বলে গিয়েছেন-মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!