সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে জিতলেন পুতিন, আগের চেয়েও বিপদে ইউক্রেন-ইউরোপ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

আলাস্কায় ট্রাম্প পুতিন বৈঠকের ছবি।

আলাস্কায় ট্রাম্প পুতিন বৈঠকের ছবি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে চুক্তির মধ্যস্থতায় পারদর্শী ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। এমনকি গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি চলাকালেও ট্রাম্প বলেছিলেন, পুতিন তাঁকে অনেক মূল্যায়ন করেন এবং এ কারণেই রুশ নেতা ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ট্রাম্পের এসব বক্তব্য কিছুটা সরলমনা মনে হয়েছে।

অন্যদিকে আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো রাজনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত নেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া প্রশ্নে তাঁর দীর্ঘদিনের দাবিও ছেড়ে দেননি। এ অঞ্চলগুলো হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক (এ দুটি অঞ্চল নিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাস গঠিত) এবং দক্ষিণে জাপোরিজঝিয়া ও খেরসন। অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্যসংখ্যার দিক থেকে রাশিয়া অনেক এগিয়ে থাকার পরও পুতিন এখন পর্যন্ত কেবল লুহানস্ক তথা একটি অঞ্চলকেই প্রায় পুরোপুরি দখল করতে পেরেছেন। তারপরও তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়ার অর্থনীতিতে ‘মন্দাবস্থা’ চলছে এবং তেলের দামও নিম্নমুখী। আর এসব কারণে রাশিয়াকে যুদ্ধ থামাতে হবে। এ যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর বড় চাপ তৈরি করেছে। যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার, শ্রমিকসংকট এবং বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগের অভাব। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস হলো তেল বিক্রি। চলতি বছর দাম কমার কারণে তেল বিক্রির আয় ১৮ শতাংশ কমে গেছে। এমনকি মন্দার কথাও শোনা যাচ্ছে।

তবে এসব চাপের পরও পুতিন তাঁর যুদ্ধ পরিকল্পনা পাল্টাননি। ট্রাম্পের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তিনি উপেক্ষা করেছেন। অথচ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সঙ্গে সঙ্গে এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন। শীর্ষ বৈঠকের আগে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন—রাশিয়া ছাড় না দিলে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং রাশিয়াকে ‘গুরুতর পরিণাম’ ভোগ করতে হবে।

আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ থেকে ট্রাম্পের খালি হাতে ফিরে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণও আছে। সফল বৈঠকের জন্য নেতা ও তাদের অধীনস্থদের পূর্বপ্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এই বৈঠক তাড়াহুড়ো করে আয়োজন করা হয়েছিল। তাড়াহুড়োর কারণে, অপ্রত্যাশিতভাবে অ্যাঙ্কোরেজে হওয়া আলোচনা নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে শেষ হয়ে যায়। এ বৈঠকে অংশ নেওয়া দুই প্রতিনিধিদলের জন্য নির্ধারিত মধ্যাহ্নভোজও বাতিল করা হয়।

শীর্ষ বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প পুতিনের সদিচ্ছার দৃঢ় প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আলোচনায় আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি।’ তিনি এ আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেন। তবে ট্রাম্প সুনির্দিষ্ট করে একটি সমঝোতার কথাও উল্লেখ করতে পারেননি। বরং এদিন ট্রাম্প প্রচলিত নিয়ম ভেঙে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজের আলোচনায় পুতিনই এগিয়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় দেননি। বরং ট্রাম্পকেই পুতিনের অবস্থান মেনে নিতে হয়েছে। সেটি হলো যুদ্ধবিরতির আগে যুদ্ধের ‘মূল কারণ’-এর সমাধানের উপযোগী একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি করতে হবে।

তবে পুতিন কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছেন। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক—অর্থাৎ পুরো দনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনা প্রত্যাহার করলে যুদ্ধক্ষেত্রের সীমারেখা আর না বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এতে রাশিয়া এমন সব ভূখণ্ড নিজের দখলে নিতে পারবে, যা টানা ৪০ মাস যুদ্ধ করেও তারা দখল করতে পারেনি।

তবে এ প্রস্তাব একধরনের টোপও হতে পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তিনি যদি শর্ত মানতে রাজি না হন, তবে পুতিনের জন্য এটা দেখিয়ে দেওয়া সহজ হবে যে ট্রাম্প ইউক্রেনের নেতাকে চাপে ফেলতে চাইছেন। এতে ইউরোপও অবস্থান নিতে বাধ্য হবে। আর ট্রাম্প যদি ব্যর্থ হন, পুতিন তখন জেলেনস্কিকেই শান্তিপ্রতিষ্ঠার পথে মূল বাধা হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন।

ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, বৈঠক ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আর কোনো আলোচনা হবে না। বৈঠক কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পুতিনকে রাজি করাতে পারেননি তিনি। ট্রাম্পের জন্য বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এটা। তবু অ্যাঙ্কোরেজে দুই প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতের অগ্রগতি নিয়ে ভবিষ্যতে বৈঠক করার কথা বলেছেন ট্রাম্প।

পুতিনও চতুরতার সঙ্গে এ বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তিনি পরবর্তী বৈঠকের স্থান হিসেবে মস্কোর কথা প্রস্তাব করেছেন। তবে তিনি বৈঠকে জেলেনস্কি বা ইউরোপীয় নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ইঙ্গিত দেননি।

শুধু অ্যাঙ্কোরেজের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে পুতিন দেখিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে একঘরে করার পশ্চিমা নীতি কার্যকর হবে না। যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে ভাগ করার মতো কোনো চুক্তির কথা না বলায় জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতারা নিঃসন্দেহে স্বস্তি বোধ করছেন।

জেলেনস্কিকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরও পুতিনের এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ট্রাম্প রাজি হওয়ায় ওয়াশিংটন ও ইউরোপের মধ্যে আরও বেশি করে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

ট্রাম্প এবার পুতিনের মতামত মেনে নিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ চুক্তি ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে না। পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হলে সব ধরনের সংঘাত থামবে। যুদ্ধক্ষেত্রের সীমা স্থির রাখার বিনিময়ে দনবাসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে শর্ত পুতিন দিয়েছেন, তাতেও একমত হয়েছেন ট্রাম্প। এ কারণে ইউক্রেন ও ইউরোপ ট্রাম্পের ওপর আরও অবিশ্বাসী হবে। আর তা পুতিনকে সুবিধা দেবে।

শীর্ষ বৈঠকের অনেক আগে ট্রাম্পের নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে পুতিন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। সিদ্ধান্তটি হলো ইউক্রেনে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় এই সহায়তার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫৯০ কোটি মার্কিন ডলার।

রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমা হামলা চালিয়ে যাবে। দেশটির স্থলবাহিনী আগের চেয়ে আরও বেশি করে ভূমি দখলের চেষ্টা চালাবে। শীর্ষ বৈঠককে কেন্দ্র করে এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বদলেছে।

ট্রাম্পের বিশ্বাস, রাশিয়ার আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি হুমকিতে ফেলেনি। আর তাই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করাটা ইউরোপীয় দেশগুলোরই দায়িত্ব। শীর্ষ বৈঠকের ঠিক আগে জে ডি ভ্যান্সও একই ধরনের কথা বলেছেন। ইউরোপীয় দেশগুলো ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট ও সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে। তবে তাদের বেশি কিছু করার জন্য আরও প্রস্তুত থাকতে হবে এবং একতা বজায় রাখতে হবে।

পুতিনের সঙ্গে আরও আলোচনার সম্ভাবনা ট্রাম্পকে এই ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে রাখবে যে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান কূটনৈতিক সংলাপ এবং চুক্তির মধ্যস্থতায় তাঁর পারদর্শিতাই (স্বঘোষিত) শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ থামাবে। যা তাঁকে কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কারের পথে এগিয়ে দেবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!