বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুহাম্মদ সাঈদ আলী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৮:০৫ পিএম

ই-কমার্স হতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন-প্রয়োজন সহায়ক নীতি

মুহাম্মদ সাঈদ আলী

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৮:০৫ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত গত এক দশকে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালে এর বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৮৩,৯৫৯ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৯১,২৬০ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

আর ২০২৮ সালের মধ্যে পৌঁছাতে পারে ১,১৯,২৪৬ কোটি টাকায়। তবুও খুচরা বিক্রির মোট বাজারে ই-কমার্সের অংশ এখনো মাত্র ৩-৫ শতাংশ। এই সংখ্যা যেমন বিশাল সম্ভাবনা দেখায়, তেমনি খাতটির নাজুক অবস্থাও মনে করিয়ে দেয়।

এই খাতের শুরুর দিনগুলো ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। ভোক্তাদের আস্থা ছিল কম, অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা ছিল সীমিত, আর লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক একেবারেই ই-কমার্স বান্ধব ছিল না। বিক্রেতাদের অনেকেই জানতেন না কীভাবে টেকসই অনলাইন ব্যবসা গড়ে তুলতে হয়। ফলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদেশি অভিজ্ঞতা, স্থানীয় উদ্ভাবন ও ধৈর্যশীল বিনিয়োগ দিয়ে খাতটির ভিত মজবুত করতে হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে দারাজ বাংলাদেশের বাজারে সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি বিনিয়োগ হিসেবে নিজস্ব ডেলিভারি নেটওয়ার্ক দারাজ এক্সপ্রেস (ডিইএক্স) গড়ে তোলে, যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কয়েক দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়।

শপআপ (রেডএক্স) লাস্ট মাইল ডেলিভারিকে শক্তিশালী করে, চালডাল অনলাইন মুদি ব্যবসা সম্প্রসারণ করে, সাজগোজ সৌন্দর্য ও জীবনধারা পণ্যে আস্থা তৈরি করে, আর পিকাবু ও বিক্রয় বাজারের বৈচিত্র্য আনে। এর সঙ্গে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন অর্থপ্রদানকে সহজ ও জনপ্রিয় করে তুলেছে।

দারাজের সেলার শিক্ষামূলক উদ্যোগের মাধ্যমে হাজারো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—গ্রাম ও শহরতলি থেকে আসা-ডিজিটাল সাক্ষরতা, বিপণন ও অনলাইন ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেছেন। প্ল্যাটফর্মটি সহজে ব্যবহারযোগ্য মোবাইল অ্যাপ, স্বয়ংক্রিয় স্টক ব্যবস্থাপনা এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সহায়ক টুলস তৈরি করেছে। সেলার কানেক্ট ও আর্লি বার্ডের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাদের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ।

এর প্রভাব কর্মসংস্থান ও অন্তর্ভুক্তিতেও স্পষ্ট। শুধু কোভিড মহামারির সময়েই প্রায় দুই লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছিল ডেলিভারি, লজিস্টিক, গুদাম, প্রযুক্তি ও গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে। বর্তমানে এই খাত লক্ষাধিক মানুষকে কর্মসংস্থান দিচ্ছে, এবং আগামী পাঁচ বছরে আরও পাঁচ লাখ চাকরির সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

গ্রাহকেরা এখন নিয়মিত প্রয়োজনীয় জিনিস অনলাইনে কিনছেন, আর বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার জন্য ই-কমার্স প্রধান আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ শুধুমাত্র কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন লেনদেন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০৩৫ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩.৬ শতাংশ বেশি। যদিও এখনো নগদ অর্থে পণ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াই প্রধান।

তবে এই পথ একেবারেই মসৃণ ছিল না-বরং একেবারে রোলার-কোস্টারের মতো। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মার্ট, ধামাকা শপিং–এর মতো ব্যর্থতা ভোক্তাদের আস্থা নষ্ট করেছিল। আস্থা ফেরাতে দারাজের মতো সংগঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করেছে সঠিক বিক্রেতা যাচাই, স্বচ্ছ রিফান্ড ব্যবস্থা, শক্তিশালী কাস্টমার সার্ভিস এবং ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার। এগুলো পুরোপুরি ঝুঁকি দূর না করলেও, প্রমাণ করেছে যে নিয়মতান্ত্রিক ও সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম–ই টিকে থাকতে পারে।

তবে চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কমিশনে মূল্য সংযোজন কর ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে বাড়ায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বড় বোঝা তৈরি করেছে। ক্রসবর্ডার ই-কমার্স নীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, ফলে ভোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্য পাচ্ছেন না, আর সরকারও সম্ভাব্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো ৪৪.৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ। এই অবকাঠামোগত ও নীতিগত ঘাটতি দূর না হলে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) রেকর্ড ছুঁয়েছে। ডিজিটাল বাণিজ্যও এখন বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের নজরে। বিদেশি বিনিয়োগ কেবল অর্থই আনে না, সঙ্গে আনে প্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির সুযোগ। ঠিক যেমন গার্মেন্টস খাতকে বিনিয়োগ এগিয়ে নিয়েছিল, তেমনভাবেই সঠিক নীতি পরিবেশ থাকলে ই-কমার্স বাংলাদেশের পরবর্তী বিশ্বমানের শিল্পে পরিণত হতে পারে।

ই-কমার্স কেবল একটি অনলাইন বাজার নয়; এটি ভোক্তা, উদ্যোক্তা, ডেলিভারি কর্মী, ফিনটেক প্রতিষ্ঠান, গুদামশ্রমিক ও সফটওয়্যার পেশাজীবীদের এক বিশাল নেটওয়ার্ক। অবকাঠামো, করনীতি, সীমান্তপারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে আজ যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে, তা-ই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাবে নাকি থেমে যাবে।

গত এক দশকের বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন খাতটির মজবুত ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন একটি স্পষ্ট ও সহায়ক নীতি কাঠামো। তাহলেই টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে, অর্ধ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে এবং ই-কমার্স বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের প্রধান স্তম্ভে পরিণত হবে।
 

লেখক: প্রশাসক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)

Link copied!