শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর প্রাণভয়ে পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের মধ্যে অধিকাংশই রয়েছেন লন্ডনে। ইউরোপের এই দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটির সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বহু বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।
সেখানে জনসম্মুখে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বের হওয়ার চেষ্টা করলেই ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়ছেন। এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ার একাধিক খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, যুক্তরাজ্য যুবলীগের এক সমাবেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে অপমান করেছেন নেতাকর্মীরা।
২১ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে ফুল দিতে গিয়ে জনতার তোপের মুখে পড়েন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলের কর্মকর্তারা তাকে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যেতে বলেন। এর মধ্যে গত মাসে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত পলাতক দুই সাবেক মন্ত্রীর মাধ্যমে লন্ডন থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।
তবে পূর্ব লন্ডনের ক্যানন স্ট্রিট এলাকায় লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের মুখে পড়েন সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান ও শফিকুর রহমান। একটি সুইটস শপে সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান এক ব্যবসায়ীর হাতে লিফলেট দিতে চাইলে তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান।
একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন আব্দুর রহমান এবং দোকান থেকে বেরিয়ে যান। পরে দলবদ্ধভাবে তারা আরেকটি ক্যাফেতে প্রবেশ করলেও সেখানেও একই পরিস্থিতির মুখে পড়েন। কাউন্টারের ব্যবসায়ী সরে দাঁড়ালে অবশেষে লিফলেট গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা ব্যারিস্টার মঞ্জুরুল ইসলাম। ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে লিফলেট হাতে ফটোসেশনে অংশ নেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, লন্ডনে ৫ আগস্টের আগে ও পরে অসংখ্য নেতা বিভিন্ন ধাপে পালিয়ে এসেছেন। জনসম্মুখে আসার চেষ্টা করলেও অনেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে এখন আর বের হচ্ছেন না। সাবেক এক মন্ত্রী লন্ডনের জনসভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে দলীয় নেতাকর্মীরা এতে বাধা প্রদান করেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক নেতা চিৎকার করে বলেন, দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে নিরাপদে পালিয়ে এসেছেন আপনি। আপনাদের অপকর্মের জন্য হাজারো নেতাকর্মী দেশে অসহায়। তারা দেশে নিগৃহীত হচ্ছে আর আপনি এখানে আরামে আছেন।
পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা সাদিক মিয়া বলেন, ‘দেশে লুটপাট করে প্রবাসীদের কাছে ভুল তথ্য প্রচার করলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মানুষগুলোকে গণধোলাই দেওয়া হবে। একেকজন মন্ত্রী হাজার কোটি টাকার বেশি লুট করে পালিয়ে এসেছেন। আমরা প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি বাঁচাই আর এরা সব লুটে বিদেশে পাচার করে।’
উল্লেখ্য, শুধু লন্ডন শহরেই রয়েছেন দলের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ দলের শতাধিক নেতা, এমনকি মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছেন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও। রয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ আমলা। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ও দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. শফিকুর রহমান চৌধুরী, ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি রণজিৎ সরকার, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ অনেকেই।

 
                            -20250308184656.jpg) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031183405.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন