অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কোনো দাবিতেই পেছাবে না নির্বাচন।’
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সরকারপ্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। আমরা তার বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম-ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি যে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদি রেজিমে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়।
এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায় জানিয়ে নাহিদ বলেন, বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়া গোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে মনে করিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়; বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিম বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে।
আওয়ামী লীগ রাজনীতির অধিকার হারিয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়ার যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী মতাদর্শ, দল এবং মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬ জুলাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শ হিসাবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সকল অধিকার হারিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :