শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন উল্লাস পাল। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে বিসিএস পর্যন্ত কখনোই প্রতিবন্ধী কোটা ব্যবহার করেননি তিনি। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন শরীয়তপুরের এই তরুণ।
উল্লাস বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও কোটা নিইনি। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকেছি।’
জন্ম থেকেই উল্লাসের দুই হাত ও পা বাঁকা। ডান হাতে নেই কোনো শক্তি, হাঁটতেও সমস্যা হয়। তবুও থেমে থাকেননি। চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতেও নেওয়া হয়েছিল, তবে শত চেষ্টা সত্ত্বেও স্বাভাবিক হয়নি হাত-পা। নিজ গ্রাম শরীয়তপুরের কার্তিকপুর পালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় তার শিক্ষাযাত্রা।
উল্লাস এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে, ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ছিলেন ৪৬৩তম। তিনি জানান, ‘ভর্তি পরীক্ষায় কোটা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নিইনি। আত্মবিশ্বাস ছিল, সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সফল হব।’
উল্লাস এর আগে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে বর্তমানে নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। ৪১তম বিসিএসে পেয়েছিলেন নন-ক্যাডার পদ। তবে ৪০তম বিসিএসে কোনো পদ পাননি। সেবার মৌখিক পরীক্ষায় একজন পরীক্ষক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন— ‘আপনার শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন কঠিন হবে না?’ এমন প্রশ্নে তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন।
তবে ৪৪তম বিসিএসে এসে বদলে গেছে সেই চিত্র। মৌখিক বোর্ড ছিল সহানুভূতিশীল ও উৎসাহদায়ক। উল্লাস বলেন, ‘আমাদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য কেউ দায়ী নন। তবে নেতিবাচক কথাবার্তা আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দেয়। আমরা চাই নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে, আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে।’
আপনার মতামত লিখুন :