শহীদ জিয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (বীরউত্তম) ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রাইভেট ব্যাংকার্স ও ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন দোয়া মাহফিল ও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করে।
কাদের গনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়ার অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি স্বীয় কীর্তিতে অমর ইতিহাসের মহানায়ক।’
রোকেয়া সরণি এলাকায় এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রাইভেট ব্যাংকার্স ও ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ জায়েদ আল ফাত্তাহ (শেখ সাব্বির), ব্যাংকার এমএ সাঈদ চৌধুরী, শেখ তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, রাইসুল আলম, আলিমুল বিন আজিজ, এইচএম মিজানুর রহমান প্রমুখ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তাসহ প্রভৃতি গুণাবলি এ দেশের গণমানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। দেশে ঐক্যের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন।’
‘অল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে জিয়া বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে দেশ-জাতিকে মুক্ত করেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় প্রমাণিত হয় তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন।’
জিয়াকে এ দেশের জাতিসত্তার রূপকার উল্লেখ করে কাদের গনি বলেন, ‘শহীদ জিয়া প্রকৃত অর্থে গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের একমাত্র স্টেটম্যান। স্বাধীনতা-উত্তর শ্বাপদসঙ্কুল রাজনৈতিক, সামরিক পথপরিক্রমা, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে দিশাহীন জাতিকে দেখিয়েছিলেন আলোর পথ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন কৃষি, শিল্প, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে স্বনির্ভরতার দিকে। দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।’
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আধুনিক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি জিয়াউর রহমান। তাকে যে বিশেষণেই বিশেষায়িত করা হোক না কেন, তাতে তার যোগ্যতার পূর্ণ প্রকাশ ঘটে না, কারণ তার কীর্তি বাস্তবিকই বিপুল ও বিশাল। জাতির প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তিনি বারবার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে।’
‘অসীম সাহসিকতা, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম নিয়ে তিনি সময়ের প্রয়োজনে আলোর দ্যুতি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। অল্প জীবনে বিশাল তার অর্জন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি কর্মগুণে জ্যোতির্ময় হতে পেরেছিলেন; যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’
কাদের গনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে গণবিমুখ একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা চালু করেন। সে দিনগুলোতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়।’
‘একদল, এক ব্যক্তির শাসনে গোটা দেশ এক জিন্দানখানায় (বন্দিশালা) পরিণত হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্রের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে অবশ্যই মত ও পথের শতফুল ফুটতে দিতে হবে। এই লক্ষ্য ও মানসেই তিনি ১৯৭৬ সালে ‘রাজনৈতিক দল বিধি ১৯৭৬’ জারি করেন। এর ফলে দেশে সব রাজনৈতিক দলের পুনরুজ্জীবনের সুযোগ ঘটে।’
বিএনপি শহীদ জিয়ার এক অনন্য সৃষ্টি উল্লেখ করে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘সব বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বিএনপি পৌঁছে গেছে সাফল্যের শীর্ষতম বিন্দুতে। বিএনপি, জিয়া ও বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে এক ও অভিন্ন সত্তায়। দেশের এক ক্রান্তিকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন।’
‘যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তৎপর ছিল। যখন দেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতা-উত্তর তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার কেড়ে নেয়।’
‘যখন হত্যা ও খুনের রাজনীতি জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজক সময়ে বিএনপির জন্ম। অর্জিত স্বাধীনতাকে আর কেউ যাতে বিপন্ন করতে না পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যেন কোনো অপশক্তি ধ্বংস করতে না পারে, সেই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।’
‘তার শাসনামলে সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ ইমার্জিন টাইগারে পরিণত হয়। তিনি বিএনপিকে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উৎপাদন ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন। নেতাপূজা, তোষামোদি ও স্লোগাননির্ভর বিদ্যমান রাজনীতির পরিবর্তে তিনি উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি চালু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের নেতাকর্মী ও জনগণকে তিনি সম্পৃক্ত করেন খাল খনন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযান, রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রভূতি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। অলস পড়ে থাকা কলকারখানাগুলোতে আবার কাজ শুরু হয়। এমনকি কোনো কোনো কারখানায় দুই শিফটেও কাজ চলে।’
জিয়া রাজনীতিকে প্রাসাদবন্দি না করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিয়ার প্রতি জনগণের ভালোবাসার কারণে বিএনপি শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে বিএনপি গণমুখী কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাই জনগণ যখনই ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছে, তখনই বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে।’
আপনার মতামত লিখুন :