সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১১:২৭ পিএম

চার শ’ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত: ইরানের হাতে কতটা ভয়াবহ শক্তি?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১১:২৭ পিএম

আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি গত ১৭ এপ্রিল তেহরানে ইরানের পারমাণবিক সাফল্য প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন। ছবি- রয়টার্স

আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি গত ১৭ এপ্রিল তেহরানে ইরানের পারমাণবিক সাফল্য প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন। ছবি- রয়টার্স

ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে (আইএইএ) না জানিয়ে পারমাণবিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটির একটি গোপন প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে। ওই তিনটি স্থান বহুদিন ধরে তদন্তের আওতায় ছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আইএইএ’র ৩৫ সদস্যের বোর্ড কমিটির অনুরোধে গোপন প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব আনার পথ সুগম হলো।

আগামী ৯ জুন শুরু হতে যাওয়া বোর্ড সভায় এই প্রস্তাব গৃহীত হলে প্রায় দুই দশকের পর প্রথমবারের মতো ইরানকে পরমাণু চুক্তিভঙ্গকারী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

যদিও ইরান দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। কিন্তু দেশগুলো বরাবরই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ তুলে আসছে।

আইএইএ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব অভিযোগকে আরও নির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ইরান অতীতে একটি গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রাসঙ্গিক এবং তা ছিল সুসংগঠিত ও গোপনীয়। কিছু কর্মসূচিতে অঘোষিত পারমাণবিক উপাদানও করা হয়েছিল।

সংস্থাটি বলছে, ইরানের এসব কর্মকাণ্ড ছিল ‘সমন্বিত ও গোপন, এবং কিছু কিছু ছিল পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। দেশটির সহযোগিতা এখনো ‘একাধিক বিষয়ে সন্তোষজনক নয়’। সংস্থাটি চারটি স্থানে ইউরেনিয়ামের চিহ্ন পাওয়ার পর থেকে উত্তর চেয়ে আসছে, যার মধ্যে তিনটি স্থানে গোপন পরীক্ষার প্রমাণ মিলেছে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটির মতে, ‘এই তিনটি স্থানসহ আরও কিছু সংশ্লিষ্ট এলাকা ছিল একটি গোপন ও কাঠামোবদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ, যা ইরান ২০০০ সালের আগে পরিচালনা করেছে এবং সেখানে গোপনে পারমাণবিক উপাদান করা হয়েছে।’

কোন কোন স্থান?

লাভিসান-শিয়ান: ২০০৩ সালে অন্তত দুইবার ইউরেনিয়াম ধাতুর চাকতি ব্যবহার করে বিস্ফোরণচালিত নিউট্রন উৎস তৈরির পরীক্ষা চালানো হয় — যা একটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণ আরম্ভ করতে ব্যবহৃত হয়। আইএইএ একে ‘ক্ষুদ্র পরিসরের পরীক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ভারামিন ও তুরকুজাবাদ: এই দুই স্থানেও অঘোষিত পারমাণবিক কার্যক্রম ও পরীক্ষার প্রমাণ মিলেছে। তুরকুজাবাদে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এই কর্মসূচির পরমাণু উপাদান বা দূষিত যন্ত্রাংশ সংরক্ষিত ছিল।

ছবি- সংগৃহীত

এই তিনটি স্থান ছাড়াও আরও কিছু সম্ভাব্য স্থান ছিল এই গোপন কর্মসূচির অংশ।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উদ্বেগ

আইএইএ জানিয়েছে, ইরানের সহযোগিতা এখনও ‘সন্তোষজনক নয়’। কয়েক বছর আগে পাওয়া ইউরেনিয়ামের চিহ্ন সম্পর্কে এখনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়নি তেহরান।

একটি আলাদা প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইরানের ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত এখন ৪০৮.৬ কেজি, যা আগের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির হিসাব মতে, এটি যদি আরও পরিশোধন করা হয়, তবে ইরানের হাতে প্রায় ৯টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।

দুই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, এত উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম পরিশোধন করা ‘গম্ভীর উদ্বেগের’ বিষয়। কারণ, বিশ্বে ইরানই একমাত্র দেশ যারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করেও এত উচ্চমাত্রায় পরিশোধন চালাচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ইসরায়েল। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে কয়েক দফায় ইরানকে আলোচনায় বসতে কৌশলে বাধ্যও করেছে।

তাদের আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যের পারমাণবিক ক্ষমতাধর হলে তেহরান ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য নিজেদের অস্তিত্ব টেকাতে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম শূন্য শতাংশে নামাতে মরিয়া ইসরায়েল।

তবে শনিবার (৩১ মে) রয়টার্সের প্রতিবেদনে ইরানের তিন স্থানে গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির খবর প্রচার হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেল আবিব। তারা বলেছে, এই প্রতিবেদন প্রমাণ করে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি সম্পন্ন করার দৃঢ় সংকল্পে এগোচ্ছে।

ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, ‘ইরানকে অবশ্যই থামাতে হবে, আর এজন্য বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে’।

যুক্তরাষ্ট্র ও আইএইএ দীর্ঘদিন ধরেই মনে করে আসছে, ইরানের একটি গোপন ও সমন্বিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ছিল, যা ২০০৩ সালে বন্ধ করা হয়। তবে ইরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

সামনে কী?

এই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে ইরানকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও তা হয়তো ভবিষ্যতের কোনো বৈঠকে ঘটবে।

তবে ততক্ষণে ইরান হয়তো তার পারমাণবিক কর্মসূচি আরও দ্রুত সম্প্রসারণ শুরু করতে পারে— যেমনটি তারা অতীতে করেছে। ফলে তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনাও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম এখন শুধু নজরদারির প্রশ্ন নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব শক্তিগুলোর অবস্থান, কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ও ইরানের প্রতিক্রিয়া—সবকিছুই আগামী দিনে বড় ভূ-রাজনৈতিক রূপ নিতে পারে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

Link copied!