জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, প্রতি বছর ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন। অথচ এই সমস্যাগুলোর সমাধানে নেই কার্যকর উদ্যোগ। উত্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার-এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগামীতে এই জনপদ বৈষম্য আর মেনে নেবে না।’
শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস লিখেছেন, ‘শুধু সংকীর্ণ টোল প্লাজার কারণে উত্তরবঙ্গের মানুষ যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্তে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় অথচ কোনো সমাধান নেই। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে প্রায় এক দশক ধরে, এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ করে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি এলাকায় সড়কের অর্ধেক কাজ পড়েই আছে, ফলে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট দেখা দেয়।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক এখনো চার লেন হয়নি। অন্যদিকে ঢাকা থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়গামী ট্রেনে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ বগুড়া হয়ে রংপুর রেলপথ থাকলে এই ভ্রমণ সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেত। কিন্তু এখন রাজশাহী-নওগাঁ-নাটোর হয়ে ২০০ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।’
সারজিস জানান, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকায় থেকে পঞ্চগড় যেতে তাঁর সময় লেগেছে ১৭ ঘণ্টা, ফিরতি পথে লেগেছে ১৫ ঘণ্টা। কারও কারও সময় লেগেছে ২০ ঘণ্টারও বেশি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে দেশের এক প্রান্তে পৌঁছাতে যদি এত সময় লাগে, তবে উন্নয়নের গল্প কতটা অর্থবহ?
তিনি আরও লিখেছেন, ‘যমুনা সেতু নির্মাণে ব্যয়কৃত অর্থ টোলের মাধ্যমে আদায় হয়ে গেছে বহু আগেই। তবুও টোল প্লাজার সংকীর্ণতার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম যানজট। এই ভোগান্তি নিরসনে টোল আদায় বন্ধ করা কিংবা বুথ তিনগুণ বাড়ানো উচিত।’
সারজিস অভিযোগ করেন, উত্তরাঞ্চল থেকে সরকার শুধু শোষণ করেছে, কিন্তু উন্নয়নের বেলায় পক্ষপাতিত্ব করেছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহরগুলোর সাথে এক্সপ্রেসওয়ে অথবা চার লেন সড়ক এবং আন্তঃবিভাগীয় ট্রেন সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আন্তঃনগর ট্রেনের পুরনো ও অপ্রতুল বগি বদলে মানসম্মত বগি সরবরাহ করতে হবে।’
তিনি উত্তরের জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আপনাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরুন, এগুলোই হতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ। যারা জনগণের কথা বলবে, লুটপাট-চাঁদাবাজি করবে না, কেবল তারাই আপনাদের ভোটের যোগ্য। যারা করবে না, তারা যে দলেরই হোক, তাদের বর্জন করুন।’
এই বার্তায় স্পষ্ট, উত্তরাঞ্চলের মানুষ আর ধৈর্য হারাতে চান না। উন্নয়ন ও অবকাঠামোর ভারসাম্য নিশ্চিত করতে এবার তারা চায় জবাবদিহিতা এবং কাজের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মূল্যায়ন।
আপনার মতামত লিখুন :