ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ। সকাল পৌনে ১০টার দিকেই কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে জাতীয় সমাবেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। এর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে ঢাকায় এসেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশস্থলে প্রবেশের সময় তাদের অনেকের হাতেই দেখা গেছে ছাতা, পানির বোতল, শুকনো খাবার ও দুপুরের খাবারের প্যাকেট। কেউ নিয়ে এসেছেন বিরিয়ানি, কেউ ডিম খিচুড়ি, আবার কেউ হাতে রুটি বা বিস্কুটের প্যাকেট। দুপুরের খাবারের পাশাপাশি অনেকে এনেছেন বসার চট বা চাদর।
খণ্ড খণ্ড মিছিল করে তারা স্লোগান দিতে দিতে সভাস্থলে প্রবেশ করছেন। এর মধ্যে কেউ মাথায় গামছা বেঁধে, কেউবা দলের পতাকা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সমাবেশস্থলে ভিড়ের কারণে অনেকেই মাঠের ভেতরে প্রবেশের আগেই গাছের ছায়ায় বসে খাচ্ছেন বা বিশ্রাম নিচ্ছেন।
এদিকে মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবকরা পানির ব্যবস্থা করেছেন। নিরাপত্তা ও ভিড় সামলাতে কাজ করছেন কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
জামায়াত নেতাদের দাবি, এটি হতে যাচ্ছে দলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক রাজনৈতিক জনসমাবেশ। প্রায় এক মাস ধরে প্রস্তুতির পর এই সমাবেশ থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’ ও ‘কল্যাণরাষ্ট্র’ গঠনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সভাপতিত্ব করছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
নিরাপত্তা ও জনসেবার অংশ হিসেবে সমাবেশস্থলে রাখা হয়েছে পাঁচ শতাধিক অস্থায়ী টয়লেট, এক হাজার পানির কল, ১৫টি মেডিকেল বুথ, ১৫টি পার্কিং স্পট এবং হাজারো চেয়ার। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। রাজধানীজুড়ে ৪০০টির বেশি মাইক বসানো হয়েছে এবং ৫০টিরও বেশি জায়ান্ট স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছেন।
এই সমাবেশে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চযোগে হাজার হাজার নেতাকর্মীর আগমন ঘটছে। যানজট বা সাময়িক ভোগান্তির জন্য নাগরিকদের কাছে আগাম দুঃখপ্রকাশ করেছে দলটি।
এদিকে, সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট গেট ও চেকপোস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। মেডিকেল টিম, পানির ব্যবস্থা, ভলান্টিয়ার টিমসহ সমাবেশ পরিচালনায় একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা গঠন করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণকালের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে।
সমাবেশে আসা বিপুল পরিমাণ লোকের গাড়ি পার্কিং, অজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন, মেডিকেল বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।
জানা গেছে, এতদিন ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে বড় সমাবেশ করেনি দলটি।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘জাতীয় সমাবেশ’ করার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে চাইছে দলটি।
এই সমাবেশে ভিন্ন বা বিশেষ কিছু রয়েছে বলে জানান জামায়াতের নেতারা। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই সমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করছে দলটি। সমাবেশ থেকে ‘জাতীয় ঐক্য’ ও ‘কল্যাণ রাষ্ট্র’ গঠনের ডাক দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :