জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী এসব দলিলকে সংবিধানে যুক্ত করলে ভবিষ্যতে নতুন করে বিতর্ক ও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত ছিলেন। সভায় জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এর খসড়া এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, জুলাই সনদে উল্লিখিত অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাব এবং ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকারের সঙ্গে বিএনপি একমত হলেও সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিয়ে দলের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। বিএনপির অভিমত হলো, এসব দলিল রাজনৈতিক গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেই যথেষ্ট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সোমবার (২৮ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, ‘খসড়ার সঙ্গে তারা মোটামুটি একমত। অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপি একমত। সেখানে শব্দ, বাক্য গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনকে জানাবে।’
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে দলীয় মতামত কমিশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই সনদের খসড়ায় ৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত আছে। এ ছাড়া জুলাই সনদের খসড়ার বাকি ছয় দফা অঙ্গীকারনামার সঙ্গে তাঁরা একমত। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অভিমত হচ্ছে, এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণ-অভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে।
এমতাবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা এটিকে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘একটা বিপ্লবকে সংবিধানে তোলার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই যথেষ্ট।’
তবে অতীতে বিএনপি জানিয়েছিল, ঘোষণাপত্রের একটি অনুচ্ছেদ সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার কথা ভাবছে তারা। যদিও এখন দলটি জানিয়েছে, ঘোষণাপত্র নিয়ে আর কোনো নতুন মতামত দেবে না।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি আর আলোচনা করতে চায় না। তবে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। কারণ, সংস্কারের ব্যাপারে তারা আন্তরিক।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                            -20250905162745-(2)-20250919184044-20250926173705-20251010164039-20251011171436-(1)-20251017163112-(1)-20251031181224.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন