বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব এবং বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, রমজানের আগেই নির্বাচন ঘোষণার মাধ্যমে জাতি আশার আলো দেখতে পেয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পেশাজীবীদের আয়োজিত র্যালি-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পরে পেশাজীবীরা বিএনপির বিজয় র্যালিতে যোগ দেন।
কাদের গনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নির্বাচন। এর মাধ্যমেই একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব। যারা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন ইতিহাস তাদের গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে মনে রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘১৭ বছর ধরে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন মানুষ ভোট দিতে চায়, অধিকার ফিরে পেতে চায়। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে দমন-পীড়নের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে।’
পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, ‘গত ১৬ বছরে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিও ছিল না। সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিককর্মী কেউই রেহাই পাননি। দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন বহু পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী।’
তিনি আরও বলেন, পদোন্নতি, বদলি ও চাকরিতে ভিন্নমতের জন্য শাস্তি ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। ডিজিএফআই, র্যাবের আয়না ঘরসহ বিভিন্ন টর্চার সেলে চালানো হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতন।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান, আবুল আসাদ, শফিক রেহমান, শহিদুল আলম, রোজিনা ইসলাম, রুহুল আমিন গাজীসহ বহু সাংবাদিক ও পেশাজীবীকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ঘটেছে গুম-খুন, ব্যাংক লুট, বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, দুর্নীতির বিস্তার।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের প্রাণ বলিদানের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় বিজয়ের ইতিহাস, যা জাতিকে আবারও আশাবাদী করেছে।’
তিনি বলেন, এই নতুন বাংলাদেশ হবে মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক, যেখানে থাকবে না গুম, খুন, দুর্নীতি, দলীয় নিয়োগ বা বৈষম্য। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র হবে জনগণের, ক্ষমতার অপব্যবহার হবে না। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে জনগণের ভোটে।
কাদের গনি বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে কেউ না খেয়ে থাকবে না, কেউ রাস্তায় থাকবে না, কেউ অন্যের দুঃখে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। নারীদের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ থাকবে, বৃদ্ধদের জন্য থাকবে যত্ন ও শ্রদ্ধা।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ হবে তরুণদের, যেখানে সম্ভাবনার হাত ধরে তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ পেশাজীবী পরিষদের নেতারা—প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ইঞ্জিনিয়ার আফজাল হোসেন সবুজ, সাংবাদিক রাশিদুল হক, ডা. রাকিব, কৃষিবিদ সানোয়ার হোসেন, অপর্না রায়, সাংবাদিক আল আমিন, রিয়েল রোমান প্রমুখ।