লক্ষ্মীপুরে এক রাজনৈতিক সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমকে ‘ভণ্ড’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তার এই বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। তারা এ্যানিকে ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনকারী’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিনের যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠান জেলা শাখার প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি জনসভায় এ্যানি চৌধুরী যে অশ্লীল, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক সৌজন্যবোধের পরিপন্থি। ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সম্পর্কে এমন অবমাননাকর মন্তব্য মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আহত করেছে।’
ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলেন, ৫ আগস্টের পর ইসলামী দলগুলোর ঐক্য এবং একক ভোট কৌশল বিএনপিকে অস্থির করে তুলেছে। এই কারণে বিএনপি ইসলামপন্থি দল ও জাতীয় ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যারা শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট ও সন্ত্রাস করে, তারাই প্রকৃত বেইমান। ২০১৮ সালের ভুয়া নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে ছয়জন এমপি পাঠিয়েছে বিএনপি। এখন তারা নিজ দোষ আড়াল করতে গিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।’
এ্যানি চৌধুরীর বক্তব্যকে ‘জাতীয় চাঁদাবাজদের মিথ্যাচার’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মিথ্যা বলা এ্যানি চৌধুরীর রাজনৈতিক হাতিয়ার। এ ধরণের বক্তব্য দেশের জনগণ ঘৃণার চোখে দেখে। আমরা তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জোর দাবি জানাই।’
বিবৃতির বিষয়ে নিশ্চিত করে ইসলামী আন্দোলন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘এ্যানির মতো একজন সিনিয়র নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রাজনৈতিক ও সচেতন মহলকে ব্যথিত করেছে। এটি পরিকল্পিত অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।’
এ্যানির বক্তব্য
এর আগে সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা আউটডোর স্টেডিয়ামে সদর পূর্ব বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য দেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। সেখানে তিনি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ‘জাতীয় বেইমান’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগকে সঙ্গ দিয়ে তাদের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার জন্য সহযোগিতা করেছে জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুটি দল হচ্ছে জাতীয় বেইমান। ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই পীর) নয়, তারা হলো ভণ্ড।
তিনি আরও বলেন, ‘৮৫ সালে ও ৯৬ সালে জামায়াত ইসলামী আওয়ামী লীগকে সঙ্গ দিয়ে শুধু আমাদের সঙ্গে বেইমানি করেনি, তারা পুরো জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত আত্মস্বীকৃত জাতীয় বেইমান। ইসলামী আন্দোলন পীর নয়, তারা হলো ভণ্ড।’
এ্যানির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘গত ১৭ বছর আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু তখন আমরা ইসলামী আন্দোলনকে খুঁজে পাইনি। ১৪ নির্বাচন, ১৮ নির্বাচন ও ২৪ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই ইসলামী আন্দোলন তথা হাতপাখা কাজ করেছে।’
এ্যানির অভিযোগ, ‘ইসলামী দলগুলো এখন পীরের নামে আন্দোলন করে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করছে। এতে নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন