ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলে যেভাবে চলছে আ. লীগের কার্যক্রম

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ১১:৪০ এএম
ঢাকায় যেটি ছিল আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়। ছবি- সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে গোপনে ‘দলীয় দপ্তর’ চালাচ্ছে বাংলাদেশের সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। খবর বিবিসি বাংলার। 

অফিসটির অবস্থান এমনভাবে গোপন রাখা হয়েছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে এটিকে রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে চেনা প্রায় অসম্ভব। তবুও কলকাতায় অবস্থানরত দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছে এটি এখন নিয়মিত বৈঠক ও যোগাযোগের কেন্দ্র।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগের পর কলকাতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা প্রথমে নিজেদের বাসাবাড়ি, ছোট ফ্ল্যাট অথবা ভাড়াকৃত রেস্তোরাঁ ও ব্যাংকয়েট হলে বৈঠক করতেন। দলীয় সমন্বয়, নির্দেশনা এবং সাংগঠনিক কাজের জন্য একটি স্থায়ী দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে কয়েক মাস আগে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটির একটি অফিস ভাড়া নেওয়া হয়।

কমপ্লেক্সটির লিফটে উঠে বাঁদিকে গেলেই সারি সারি অফিস কক্ষ দেখা যায়। এর মাঝখানে প্রায় ২,৫০০-২,৬০০ বর্গফুটের একটি কক্ষই আওয়ামী লীগের এই নতুন দপ্তর। বাইরে বা ভেতরে কোথাও শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমান বা দলীয় কোনো প্রতীক বা সাইনবোর্ড নেই। এমনকি ঘরের ভেতরেও নেই কোনো দলীয় পোস্টার বা ব্যানার। একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগের ভাড়াটেদের রেখে যাওয়া চেয়ার টেবিল ব্যবহার করেই বৈঠক হয়।

এখানে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩০–৩৫ জন বসতে পারেন, তবে বড় বৈঠক যেখানে শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকেন সেগুলো এখনো রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকয়েট হল ভাড়া নিয়ে আয়োজন করা হয়। ছোটখাটো বৈঠক এখনো অনেক সময় নেতাদের ব্যক্তিগত বাসায় অনুষ্ঠিত হয়।

৫ আগস্টের পর কলকাতা ও এর আশপাশে অবস্থান নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বহু শীর্ষ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, প্রায় ৮০ জন বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি–সম্পাদক, মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কিছু পুলিশ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং পেশাজীবীরা।

কেউ সপরিবারে বাস করছেন, আবার কেউ কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। অনেকে এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় থাকছেন।

দপ্তরে আসার নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। প্রয়োজনে নেতারা এসে বৈঠক বা আলোচনা সারেন। প্রতিদিন সবার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়।

দলীয় সূত্র বলছে, সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকেই এই দপ্তরের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত নন। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এমন কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। কলকাতার রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, দপ্তরের কার্যক্রম ও যাতায়াত নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক দপ্তর স্থাপন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হতে পারে, বিশেষ করে নেতৃত্ব ও সমন্বয় বজায় রাখার জন্য। তবে এমন গোপনীয় কার্যক্রম ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিতে পারে।