ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

দ্য উইক-এর বিশ্লেষণ

যে কারণে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
ছবি - সংগৃহীত

গত বছরের জুলাই–আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের ওপর মারাত্মক দমন-পীড়নের নির্দেশ ও সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিচারের রায় ঘোষণার আগে আদালত তদন্ত করে দেখেছে- ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করার জন্য শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে সহিংসতার নির্দেশ দেন। এতে ১ হাজার ৪০০-এরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়।

এই বিচার কার্যক্রমে ভারতে নির্বাসিত হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়, এর মধ্যে রয়েছে- বিক্ষোভকারীদের হত্যায় উস্কানি দেওয়া এবং অস্থিরতা দমনে মারাত্মক অস্ত্র, ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশ।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, হাসিনা বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শেখ হাসিনা কে?

হাসিনা সাবেক রাষ্টপ্রতি শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা। ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হলে তিনি ভারতে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন।

১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি তার শাসনামলকে ঘিরে দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও ছিল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সঙ্গে নেন বোন শেখ রেহানাকে।

যে কারণে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে?

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রায়ের ঘোষণা আদালতকক্ষে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানানো হয়।

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন সপ্তাহের বিক্ষোভে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। এবং এসব মৃত্যু হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই আন্দোলনে বেশিরভাগ মানুষ গুলিতে মারা যান। নিহতদের মধ্যে ১২–১৩ শতাংশ শিশু ছিলেন।

হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলকে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ১৯৯৬–২০০১ এবং ২০০৯–২০২৪ পর্যন্ত প্রায় দুই দশক ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতি, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি যে কঠোর দমন-পীড়ন পরিচালনা করেন, সেটিকে ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এদিকে এই রায় ঘোষণার পরপরই ভারত সরকারের কাছে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বার্তা পাঠানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই রায়কে কেন্দ্র করে ভারতের উপর হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য চাপ বাড়তে পারে।

গত বছর বিদ্যমান প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানালেও ভারত তখন সাড়া দেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায় ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।