ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলে সম্প্রতি দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
সাত বছর আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি সংগীত ভিডিওতে মডেলিং করার দায়ে ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকারকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
আর একই সময়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে অতীত সংশ্লিষ্টতা থাকা চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে বিএনপির অভ্যর্থনা উপকমিটিতে সদস্য মনোনয়ন দিয়ে।
এতে ছাত্রদলের ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে একজনের বিরুদ্ধে অতীতের ‘দোষে’ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আরেকজনের ক্ষেত্রে কেন এত উদারতা? একই মানদণ্ডে বিচার না হওয়ায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার ২৪২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি।
এই কমিটিতে বিতর্কিতভাবে স্থান পেয়েছিল ছাত্রলীগের সাবেক বেশ কয়েকজন কর্মী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদ্রূপ করা এক নারী শিক্ষার্থী।

এসব তথ্য প্রকাশের পর, ছাত্রদলের ছয় নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যদিও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ওই কমিটিতে অন্তত ৪০ জন ‘অনুপ্রবেশকারী’ বিতর্কিত নেতা ছিলেন।
সর্বশেষ ৩০ জুন (সোমবার), সাত বছর আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি সংগীত ভিডিওতে মডেলিং করার অভিযোগে ঢাবি ছাত্রদলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। বিষয়টি কেন্দ্র করে সংগঠনের ভেতর ও বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এরই মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন শাখা ছাত্রদলের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা, যিনি সম্প্রতি বিএনপির "জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন" অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন।
মেঘলার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ৫ আগস্ট ২০২৩-এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং নিয়মিতভাবে সংগঠনটির কার্যক্রমে অংশ নিতেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যে অভিযোগে শরীফকে বহিষ্কার করা হলো, সেই অভিযোগে মেঘলার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে না?
জানা গেছে, শরীফ উদ্দিন সরকার ঢাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বহিষ্কারের বিষয়ে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি সাত বছর আগে শিবিরের ‘পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে’ শীর্ষক একটি সংগীতে মডেলিং করেছিলেন।
এ নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ছাত্রশিবির নাকি অন্য সংগঠনের ভেতরে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে রাখে, এতদিন এটাই শুনে এসেছি। সেই হিসেবে শরীফ ভাই তো ছাত্রলীগ করতে পারতেন, তাতে সুবিধাও পেতেন। কিন্তু গত ছয় বছর ধরে তাকে ছাত্রদলের হয়ে কাজ করতে দেখেছি। তাই তার বহিষ্কারের খবর আশ্চর্যজনক।’
এদিকে, বিএনপির গঠিত ৫৬ সদস্যের অভ্যর্থনা উপকমিটিতে জায়গা পাওয়ায় মেঘলাকে ঘিরে ছাত্রদলের ভেতর তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে এবং সদস্যসচিব শামা ওবায়েদকে।
উপকমিটিতে স্থান পাওয়া ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি রেহানা আক্তার শিরিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ করা মেয়ের নিচে আমার নাম থাকবে কেন? জুনিয়র-সিনিয়র না দেখে কীভাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হলো? এই সিন্ডিকেট কারা? বসন্তের কোকিলেরা দল বিপদে পড়লে থাকে না, আর যারা তাদের পুনর্বাসন করে তারাও একসময় বিপদে পড়ে।’
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মামুন খানও সমালোচনায় বলেন, ‘জুলাই উদযাপন কমিটিতে যারা জায়গা পেয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করলে ভালো হতো। যারা এসব নিয়ে কাজ করছেন তারা হয়তো মেধাবী, কিন্তু তাদের চারপাশে মেধাহীনদের ভিড় বেশি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক শাখা নেতা জানান, শরীফ সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদলের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। তাই তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। অপরদিকে, মেঘলা এবং ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট আরও অন্তত ৪৪ জন বিতর্কিত নেতা এখনো ছাত্রদলের কমিটিতে আছেন, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি যা রহস্যজনক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ১০ মিনিট পর কল দিতে বলেন। পরে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।
আপনার মতামত লিখুন :