আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুধু অংশই নেবেন না, তিনি ঢাকাসহ তিনটি আসনে প্রার্থী হবেন। বিএনপির মিডিয়া উইং থেকে এসব তথ্য রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা, বগুড়া ও ফেনী থেকে একটি করে আসনে নির্বাচন করবেন। তবে কোন তিনটি আসন তা সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বগুড়া-৭, ঢাকা- ১৭ ও ফেনী-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কেন বগুড়া-৭, ঢাকা- ১৭ ও ফেনী-১ আসনে প্রার্থী হতে পারেন খালেদা জিয়া?
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বগুড়া-৬ অথবা ৭ আসন থেকে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কারণ গাবতলী-শাহজাহানপুর নিয়ে গঠিত এই আসন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি। এলাকাটি বিএনপির কাছে আবেগের।
আর ঢাকা-১৭ তথা গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বর্তমানে এই এলাকায়ই থাকেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’ গুলশানে অবস্থিত। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচনের আগে এখানেই বালুর ট্রাক দিয়ে তাকে আটকে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বিগত সময়গুলো এখানেই কেটেছে বেশি। ‘ফিরোজা’ এখন বেগম খালেদা জিয়ার অবিচ্ছিন্ন অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তা ছাড়া ক্যান্টনমেন্ট এলাকা তার স্বামী ও প্রেসিডেন্ট জিয়ার স্মৃতি বিজড়িত স্থান। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উৎখাত হয়েছিলেন বেগম জিয়া। ফলে নানা কারণে এই এলাকা থেকে আসন্ন নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আর বেগম জিয়ার তৃতীয় আসনটি হতে পারে ফেনী-১ আসন। কারণ জন্মস্থান দিনাজপুর হলেও বিএনপি চেয়ারপাসনের আদি পৈতৃকনিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ী। আর ফেনী-১ আসনটি ফুলগাজী উপজেলা, পরশুরাম উপজেলা ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত।
বিএনপি চেয়ারপারসন ফেনী থেকে প্রার্থী হবেন, সেটি প্রকাশ্যেই বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তবে তিনি কোন আসন থেকে প্রার্থী হবেন সেটি বলেননি।
বুধবার সকালে ফেনী জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় পিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করি, আমাদের দলের নেত্রী (খালেদা জিয়া) ফেনী থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। আশা করি, তিনি বিজয়ী হবেন।’
দেড় দশক পর প্রার্থী হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া
ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী ২০০৮ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়ে সবগুলোতেই জয়ী হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচন দলীয়ভাবে বয়কট করে বিএনপি। এতে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হননি বিএনপি প্রধান।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে কথিত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। পরে বিগত ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনও বয়কট করে বিএনপি। ফলে দেড় দশক পর নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
২০০৮ সালের আগে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সংসদ নির্বাচনেও পাঁচটি করে আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবং সবগুলোতেই জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার এক গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিএনপির বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা আদালতের রায়ে খারিজ হয়ে যায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট তাকে দুটি মামলায় খালাস দেওয়ায় এখন তার নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো আইনি বাধা নেই।
আপনার মতামত লিখুন :