দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতিবিরোধী লড়াই আরও শক্তভাবে এগিয়ে নিতে দলের সাতটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তারেক রহমান লেখেন, দুর্নীতির ভয়াবহ প্রভাব বুঝতে বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। চাকরি খুঁজতে বের হওয়া তরুণ-তরুণী, কৃষকের ভোগান্তি, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার জটিলতা, ব্যবসায়ীদের ঘুষের চাপে পড়ে বাধ্য হওয়া এসবই দুর্নীতির সরাসরি ফল। খাবারের দাম বৃদ্ধি, মানসম্মত শিক্ষা না পাওয়া, রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতাসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা সংকটের পেছনে দুর্নীতিকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী লড়াই নতুন নয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস অতীতের সেই লড়াই ও অর্জনগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ এবং পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন—এসবকেই দুর্নীতি কমানোর ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন ছিল বড় অগ্রগতি। স্বাধীন কমিশন হওয়ায় সরকার চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না এ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়। টিআইবির জরিপে তখন দুর্নীতি কমার প্রমাণ মিলেছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
যেসব বড় পরিবর্তনের জন্য বিএনপি গর্ব করতে পারে সেসব বিষয়ও ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন তারেক রহমান। তার মতে বিএনপি ১। শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা: বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিং-বিরোধী আইন। ২। স্বচ্ছ ক্রয় নীতি: প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র, নিয়মের মধ্যে সরকারি ক্রয়- যা পরবর্তীতে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে। ৩। উন্মুক্ত বাজার: টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন; যেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ায় দুর্নীতি কমে, সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে। ৪। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: প্রশাসন কম জটিল, কম ইচ্ছাধীন, বেশি মানুষের কাছে জবাবদিহিতা।
আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির পরিকল্পনাও তুলে ধরেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেগুলো হলো: ১। প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে। ২। পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র ব্যবস্থা, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল-টাইম অডিট, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন। ৩। বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ। ৪। ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট; সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০–৬০% দুর্নীতি কমতে পারে)। ৫। হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান। ৬। নৈতিক শিক্ষা: স্কুল–কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করা ও ৭। শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট, সংসদের কঠোর তদারকি।
পরিবর্তনের আশা
তারেক রহমান লিখেন, বহু বছরের অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হলেও তা অসম্ভব নয়। সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন পাওয়া গেলে বাংলাদেশ আবারও পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন