শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, দুবাই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম

প্রবাসীর যত দুঃখ

তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, দুবাই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম

ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট

বিদেশে কর্মরত বাঙালি প্রবাসীদের জীবনের গল্প অনেকটা একই রকম। দেশ ছেড়ে তারা পাড়ি জমায় দূর প্রবাসে, পরিবার ও প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু প্রবাসী জীবনের বাস্তবতা তাদের কাছে প্রায়শই কঠিন, অনেকটা একাকিত্ব ও ত্যাগের সঙ্গে জড়িত। দেশ এবং প্রবাসের মাঝে টানাপোড়েনের এই জীবনে প্রবাসীদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাক তাদের বুকে বয়ে বেড়াতে হয় নীরবে।

পরিবারের থেকে দূরে থাকা

প্রবাসীদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা। পরিবারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় বছরে এক বা দুইবার, কখনো কখনো সেটাও সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যেসব প্রবাসীরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করেন, তাদের অধিকাংশই বছরে একবারের বেশি দেশে ফেরার সুযোগ পান না। অনেকেই আবার এক টানা দশ-বারো বছরও দেশে ফিরতে পারেন না। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পরিবারের অনেক পরিবর্তন ঘটে-শিশুরা বড় হয়, বাবা-মায়েরা বুড়িয়ে যান। কিন্তু প্রবাসীরা এই পরিবর্তন দেখতে বা অনুভব করতে পারেন না। নিজের সন্তানের প্রথম হাঁটতে শেখা, মায়ের অসুস্থতা কিংবা বাবার শেষ কালের সঙ্গ-সব কিছু থেকেই তারা বিচ্ছিন্ন থাকে।
প্রযুক্তির কল্যাণে এখন দেশে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলা সম্ভব হলেও শারীরিক উপস্থিতির অভাব পূরণ হয় না। প্রবাসীদের মানসিক দুঃখ বাড়িয়ে তোলে এই দূরত্ব, যা তাদের মনে একধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করে।

কঠোর পরিশ্রম আর অর্থনৈতিক চাপ

প্রবাসীরা তাদের পরিবারের সচ্ছলতা ও উন্নতির জন্যই দেশ ছেড়ে বিদেশে গমন করেন। তবে এই অর্জন সহজ কোনো ব্যাপার নয়। অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক বিদেশের নির্মাণ খাত, পরিবহন, সেবা খাত বা কৃষিকাজের মতো কঠোর শ্রমশক্তির ওপর নির্ভরশীল কাজে যুক্ত থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা, প্রচণ্ড গরম বা শীতের মধ্যে কাজ করে তারা মাস শেষে পরিবারে টাকা পাঠান। কিন্তু পরিবারের জন্য যে ত্যাগ তারা করছেন, তার আসল মূল্য তারা নিজেরা প্রায়শই পান না। বাড়িতে টাকা পাঠানোর পর তাদের নিজেদের জীবন চালানো অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বাড়ি নির্মাণ, সন্তানদের পড়াশোনা, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং পরিবারের অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক প্রবাসী নিজের জন্য সঞ্চয় রাখতে পারেন না। অনেক সময় প্রবাসীরা নিজেরাই অর্থনৈতিক চাপে ডুবে থাকেন।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপ

প্রবাসে একাকিত্ব আর বিচ্ছিন্নতার জীবন সহজ নয়। বিদেশের মাটিতে কাজ করতে গিয়ে ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস-সবকিছুই একেবারে ভিন্ন হয়ে ওঠে। দেশীয় সংস্কৃতি, উৎসব পালন থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। প্রবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের নিজ সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারলেও সঠিকভাবে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে প্রবাসীদের জন্য নতুন সম্পর্ক গড়া যেমন কঠিন, তেমনি পুরনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাও কঠিন।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভাবের কারণে অনেক প্রবাসী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একাকিত্বের কারণে তাদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয়। এসব প্রবাসীর জন্য কখনো কখনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিংও প্রয়োজন হয়ে পড়ে, যা তারা সহজে পেতে পারেন না।

বৈষম্য ও পরিচয়ের সংকট

অন্য দেশে বসবাস করলেও প্রবাসীদের পুরোপুরি সেখানকার সমাজের অংশ হতে পারা কঠিন। তাদেরকে প্রায়ই বিদেশি হিসেবে দেখা হয়, যা তাদের পরিচয় সংকটে ফেলে দেয়। কাজের জায়গায় বৈষম্য, বর্ণবাদী আচরণ, এমনকি আইনি জটিলতা বা ভিসার সমস্যা-এসবও প্রবাসীদের জন্য সাধারণ ঘটনা। অনেক সময় ভাষাগত কারণে বা নাগরিকত্বের সংকটে তারা সঠিকভাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন না। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে অনেক প্রবাসী কঠোর শ্রম দেওয়ার পরও ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হন।

দেশে ফিরে আসার অনিশ্চয়তা অনেক

প্রবাসীর স্বপ্ন থাকে দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করে দেশে ফিরে আসার। কিন্তু দেশে ফেরার পর প্রবাসীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। প্রবাসী জীবন থেকে ফিরে এসে দেশে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার জন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন হয়। অনেক সময় দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর দেশে ফেরা হলে প্রবাসীরা নিজেদের কাজে সঠিকভাবে মিশিয়ে নিতে পারেন না। যে অর্থ প্রবাসীরা রোজগার করেছেন, সেটা অনেক সময় সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হলে, তাদের জীবনের অর্জিত অর্থ অপচয় হয়ে যায়। দেশের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে কিংবা ব্যবসা শুরু করতে চাইলেও অনেক সময় প্রবাসীরা সরকারি সহযোগিতা পান না। ফলে প্রবাসীরা মনে করেন যে, তাদের এই ত্যাগের মূল্য দেশে সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রবাসী জীবনের ত্যাগের মূল্য

দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায়, যা উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই প্রবাসীদের ত্যাগ এবং কষ্টের প্রকৃত মূল্য অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে। প্রবাসীদের জন্য হয়তো সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে অনেকেই সঠিক সহযোগিতা পান না। প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তারা দেশে ফিরে এসে একটা সুষ্ঠু জীবন গড়ে তুলতে পারেন।
প্রবাসীদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, ত্যাগ ও সংগ্রামের কাহিনি কোনো কল্পনা নয়, বরং বাস্তব। তারা পরিবার, দেশ এবং নিজেকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে তাদের যে ত্যাগ, তা শুধুু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও মানসিক দিক থেকেও অসীম কষ্টের। তাদের এই আত্মত্যাগকে সম্মান জানানো এবং তাদের জীবনের এই শূন্যতা পূরণে দেশ ও সরকারের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া জরুরি।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!