শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. মনিরুজ্জামান, মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:২০ এএম

মালয়েশিয়ায় অন্ধকারে ৩০০ প্রবাসীর ভাগ্য

মো. মনিরুজ্জামান, মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:২০ এএম

মালয়েশিয়ায় অন্ধকারে ৩০০ প্রবাসীর ভাগ্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ২০০ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের কাউয়াগুচি ম্যানুফেকচারিং এসডিএন বিএসডি কোম্পানিতে কলিং ভিসায় কাজের জন্য আসেন। কিন্তু এসব কর্মীর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে অন্ধকারে ছেয়ে যায়। কোম্পানিতে কাজ শুরুর প্রথম মাস থেকেই নেই ঠিকমতো বেতন, নাই খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকা।

চার লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইটের আগে ঋণ করে, সুদে, জমি বিক্রি করে একেকজন ছয় থেকে সাত লাখ টাকা বাংলাদেশে রিক্রুটিং এজেন্সিকে দিয়ে মালয়েশিয়াতে পাড়ি দেয় বলে জানায় কাউয়াগুচি কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হওয়া প্রবাসী কর্মীরা। বর্তমানে এসব কর্মীর জীবন চলার জন্য খাবার কিনে খাওয়ার মতো যেমন টাকা নাই, আবার মাথার উপরে আছে পাওনাদারের ঋণ পরিশোধের চাপ। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, পিএন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি ঢাকা লি. এজেন্সির নামে  ২০২৩ সালের ৮ জুন দূতাবাসের লেবার মিনিস্টারের নাজমুস সাদাত স্বাক্ষরিত ৫০ জন কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করেন। ঠিক ২ মাসের মাথায় ২০২৩ সালের আগস্টের ২১ তারিখে লেবার উইংয়ের প্রথম সচিব সুমন চন্দ্র দাস স্বাক্ষরিত মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশন লিঃ এজেন্সির নামে ১৫০ জন কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করেন। অথচ প্রথম ডিমান্ডের ৫০ জন কর্মীর মধ্যে ৪৫ জন  আসে ১১ সেপ্টেম্বরে। তাহলে প্রশ্ন হলো, প্রথম ডিমান্ডের কর্মী আসার আগেই প্রথম সচিব সুমন চন্দ্র দাস ১৫০ জন কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করলেন কেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে আগের কর্মীদের অবস্থার খোঁজখবর না নিয়ে অতিরিক্ত কর্মীদের ডিমান্ড সত্যায়ন করেন। ফলে দূতাবাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অতিরিক্ত কর্মী আসায় এসব কর্মীর ভাগ্য এখন অন্ধকারে।

ভুক্তভোগী কর্মীরা বলেন, ’২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমরা প্রথমে ৪৫ জন  আসার পর থেকে ঠিকমতো বেতন পাইনি। এমন অবস্থায় পড়ায় আমরা বাংলাদেশে যে এজেন্সির মাধ্যমে এসেছি তাদের কাছে শত শত বার বলেও কোনো সমাধান পাইনি। পরে ’২৩ সালের ডিসেম্বরে দূতাবাসে আমরা সবাই অভিযোগ করি। তখন লেবার উইংয়ের প্রথম সচিব সুমন চন্দ্র দাস আমাদের আশ্বাস দেন, আমাদের বেতন জানুয়ারি থেকে সব পরিশোধ করে দিবে কিন্তু বাস্তবে সেটার কোনো ফল আমরা কেউ পাইনি। আমাদের এখন জীবন বাঁচানো দায়। আমরা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সাহায্য কামনা করি। এ বিষয়ে দূতাবাসের প্রেস সচিব সুফী মারুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেন না। পরে দোতলায় প্রধান প্রণব কুমার ভট্টাচার্যকে কল দিলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি তেমন জানি না, লেবার উইংয়ের কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম সব ভালো বলতে পারবেন। এর পরে দূতাবাসের লেবার উইংয়ের কাউন্সিলর শরিফুল ইসলামকে একাধিকবার কল করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

হোয়াটসঅ্যাপে লিখিতভাবে কাউয়াগুচি ম্যানুফেকচারিং কর্মীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসএমএসের মাধ্যমে জানান, আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছি। অনুগ্রহ করে প্রথম সচিব মারুফের সঙ্গে কথা বলুন। এর পরে কাউন্সিলর শরিফুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপে লিখিতভাবে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়, কাউয়াগুচি ম্যানুফেকচারিং এসডিএন বিএসডি কোম্পানিতে কলিং ভিসায় লোকগুলো বাংলাদেশের কোন রিক্রুুটিং এজেন্সি থেকে পাঠিয়েছিল? তারা কি দেখে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল এবং দূতাবাস থেকে কোন অফিসাররা সত্যায়ন দিয়েছিল? তখন দূতাবাসের অফিসাররা কি দেখে সত্যায়ন করেছিল?  কারণ প্রথম ৪৫ জন শ্রমিক আসার পর থেকে বেতন পাই না বলে অভিযোগ আছে। তাহলে ২ মাসের ব্যবধানে পরবর্তীতে সেই কোম্পানিতে কী করে এত শ্রমিকের সত্যায়ন দিল দূতাবাসের অফিসাররা? সত্যায়ন প্রথমে ৫০ জনের দিয়েছিল। এক মাস না যেতেই দূতাবাসের অফিসাররা কী এমন দেখল যার কারণে ১৫০ জনের সত্যায়ন দিয়েছিল? এই ২০০ জনের পরিণতির জন্য তাহলে কি দূতাবাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জড়িত না? এই প্রশ্ন ওইসব প্রবাসী শ্রমিকদের।

লেবার উইংয়ের কাউন্সিলর শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে দূতাবাসের প্রেস সচিব সুফী মারুফের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কাউয়াগুচি ম্যানুফেকচারিং এসডিএন বিএসডি কোম্পানির বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য আন-অফিসিয়াল নোটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য প্রেরণ করা হলো।

কাউয়াগুছি ম্যানুফেকচারিং এসডিএন বিএইচডি কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের পক্ষ থেকে গত সেপ্টেম্বর মাসে বকেয়া বেতনসংক্রান্ত একটি অভিযোগ হাইকমিশনের নজরে আসে। হাইকমিশন তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাইকমিশনের উপস্থিতির অনুরোধ জানালে হাইকমিশনে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একটি সভার আয়োজন করে। ওই সভায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে বকেয়া বেতন ধাপে ধাপে ডিসেম্বর মাসের পূর্বে পরিশোধের ব্যাপারে কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সভার তিন দিন পরে হাইকমিশনের কর্মকর্তা প্রথম সচিব (শ্রম) সুমন চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে কোম্পানির সভাকক্ষে প্রতিশ্রুত প্রথম কিস্তির বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয় এবং যথারীতি কর্মীগণ কাজ করেন এবং কাজের বিপরীতে প্রাপ্য বেতন পেতে থাকেন। গত কিছুদিন পূর্বে কর্মীদের পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন প্রাপ্তিসংক্রান্ত পুনরায় অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাইকমিশনের উপস্থিতির অনুরোধ জানিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাগণের সঙ্গে হাইকমিশনে সভা করা হয়। ওই সভায় কোম্পানি তাদের আর্থিক দুরবস্থা, বিদেশি ক্রয় আদেশ বাতিলের  পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন বন্ধের বাস্তবতাসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং কর্মীদের কর্মসংস্থানসংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানিকে নিশ্চিত করার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ ডিসেম্বর রাতে কোম্পানিতে কর্মরত কর্মীদের কর্ম বর্জন ও অফিস ঘেরাও করার খবর পেয়ে হাইকমিশনারের নির্দেশে রাত ১১টায় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) সুমন চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কোম্পানিতে উপস্থিত হয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পুলিশ বিভাগের সদস্য ও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৩ ডিসেম্বর রাতের আলোচনার ধারাবাহিকতায় অংশ হিসেবে সকালে আবার পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার, সহকারী পুলিশ সুপার, এর প্রতিনিধি, কোম্পানির কর্মকর্তাগণ ও কর্মীদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দীর্ঘ আলোচনাপূর্বক সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়। 

ইতোমধ্যে দায়েরকৃত অভিযোগের শুনানি ১৮ ডিসেম্বর থাকার কারণে ওই দিন পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করার বিষয়ে সভায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ ডিসেম্বর পোর্ট ক্লাং কোর্টে দায়েরকৃত অভিযোগের শুনানি ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীগণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে উভয়পক্ষের সম্মতিতে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরোনো কর্মীদের মধ্যে যারা দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক তাদের কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় জানুয়ারি মাসে দেশে ফেরত পাঠানো, অন্যান্য কর্মীকে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন করে তাদের নতুন কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ ও বকেয়া বেতন বিভিন্ন কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কোম্পানির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষাপূর্বক কাজ করে যাচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!