রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আত্মিক উন্নতি সাধনে রোজা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাদিসে কুদসির বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে দেব।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৫১/১৬৫)
মুসলমানদের জন্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রোজা ঠিকঠাকভাবে পালন করা আবশ্যক। কিন্তু অনেকেই জানেন না কী করলে রোজা ভেঙে যায়। তাই চলুন ইসলামী শরীয়া মোতাবেক কী করলে রোজা ভেঙে যায় তা জেনে নেই:
ইচ্ছে করে কোন কিছু খাওয়া: ইচ্ছে করে কোন কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। ভুলক্রমে খেলে তা অবশ্য ভিন্ন বিষয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত বুখারি মুসলিমসহ সব সহিহ হাদিসগ্রন্থে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে ফেলে, তারপরেও সে যেন রোজা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে আহার করিয়েছেন।’ (বুখারি: ১৮৩১, মুসলিম: ১১৫৫)
ইচ্ছে করে কোন কিছু পান করা : ভুলে কোন কিছু পান করলে রোজা না ভাঙলেও স্মরণ হওয়ার পরও যদি খেতে থাকেন অথবা কেউ জোর করে কিছু খাওয়ালে রোজা ভেঙে যাবে। এছাড়াও সেহরি বা ইফতারের সময় হয়ে গেছে মনে করে কোন কিছু পান করলে তবে চার ইমামের মতে রোজা ভেঙে যাবে। (মুসান্নিফ ইবনে আবি শাইবা, খন্ড. ৬ পৃষ্ঠা. ১৪৯-৫০)
ইচ্ছে করে সহবাস বা সম্ভোগ করা: রোজায় দিনের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্বামী ও স্ত্রী উভয়কে সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কেননা এ কারণে রোজা ভেঙে গেলে তার কাজা ও কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে। তবে কেউ যদি ভুল করে সহবাস করে ফেলে আর স্মরণ হওয়া মাত্রই বিরত থাকে তার রোজার কোন অসুবিধা হবে না। একইভাবে ইচ্ছে করে হস্তমৈথুন করলে বা বীর্যপাত ঘটালেও রোজা ভেঙে যাবে। তবে সপ্নোদোষ হলে রোজা ভাঙবে না। কারণ এটি ইচ্ছাকৃত নয়। আবার সহবাসের পর বীর্যপাত না হলেও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের রোজাই ভেঙে যাবে। (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৭০৯; জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৭২৪।)
ইচ্ছে করে বমি করা: ইচ্ছে করে বমি করা রোজা ভঙের অন্যতম কারণ। কোন কিছুর ঘ্রাণ নিয়ে কিংবা গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু অনিচ্ছায় বমি হলে রোজা ভাঙবে না। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিস সংকলন গ্রন্থ আল মুসানাদে আহমাদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজায় উল্লেখ আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘স্বাভাবিকভাবে কারো বমি হলে রোজা কাজা করতে হবে না। কিন্তু কেউ ইচ্ছে করে বমি করলে কাজা করতে হবে।’ তবে, হানাফি মাজহাবের আলেমদের মতে, অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলেও রোজা ভেঙে যাবে। (আল বাহরুর রায়েক, খন্ড. ২, পৃষ্ঠা. ২৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী, খন্ড. ৩, পৃষ্ঠা. ৩৪৬।)
রোজা রাখা অবস্থায় খাদ্য কণা খেয়ে ফেলা: রোজা রাখা অবস্থায় খাদ্য কণা খেয়ে ফেলার পাশাপাশি বিভিন্ন অখাদ্য বস্তু, যেমন, লোহা, ইটের কণা খেয়ে ফেললেও রোজা ভেঙে যাবে।
রক্ত, ঘাম ও কুলির পানি খেয়ে ফেলা: দাত মাজনের সময় কিংবা মেসওয়াক করার সময় দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত গিলে ফেললে, ঘাম কিংবা কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি গিলে ফেললেও রোজা ভেঙে যাবে। ভেঙ্গে যাওয়া এসব রোজার কেবল কাজা আদায় করলেই চলবে। কাফফারা দিতে হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার খন্ড. ২, পৃষ্ঠা. ৩৯৫; ইমদাদুল ফতোয়া, পৃষ্ঠা. ৬৮১)
খাবারের বিকল্প কিছু গ্রহণ করা: খাবার খাওয়ার বিকল্প হিসাবে রক্ত গ্রহণ; শক্তিবর্ধক স্যালাইন গ্রহণ; গ্লুকোজ ইনজেকশন ইত্যাদি গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে।
সারাদিন অজ্ঞান থাকা: কেউ যদি সারাদিন বেহুশ থাকে, তবে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। এজন্য তাকে রোজা কাজা রাখতে হবে।
ওষুধ গ্রহণ করা: রোজা রাখা অবস্থায় নাক-কান-গলা কিংবা পায়ুপথ দিয়ে যে কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে।

 
                             
                                    -20250301130014.webp)
-20250301122335.webp)
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন