বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জাহাঙ্গীর আলম জাবির

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ১০:১৩ এএম

জুমাতুল বিদা ও মুমিনের করণীয়

জাহাঙ্গীর আলম জাবির

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ১০:১৩ এএম

জুমাতুল বিদা ও মুমিনের করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

মাহে রমজানের শেষ জুমা মুসলিম উম্মাহর কাছে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। এ জুমার কিছু কথা, কিছু জিজ্ঞাসা এবং করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো। রমজান শুরু হলো রহমত , মাগফিরাত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে। দেখতে দেখতে তা শেষপ্রান্তে। আজ ২৭ রমজান, রমজানের শেষ জুমা।

জুমাতুল বিদায় কিছু জিজ্ঞাসা, চিন্তাভাবনা ও করণীয় প্রসঙ্গে তুলে ধরা হলো-জুমাতুল বিদার মাধ্যমে আমরা রমজানকে বিদায় জানাতে চলেছি। কিন্তু কীভাবে? বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে না বিশ্বস্ততার সঙ্গে। রমজান এসেছিল কোরআন, সিয়াম, কিয়াম ও তাকওয়ার উপহার নিয়ে। আমরা কি রমজান বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে উল্লিখিত আমল ও শিক্ষাগুলোও  বিদায় করে দেব? নাকি তা গ্রহণ করব, মন এবং মননে ধারণ করব? যদি ধারণ ও গ্রহণ না করি, তাহলে রমজানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।

কত কষ্ট করে সারা মাস তারাবিতে কোরআন শুনলাম আমরা। যদি বুঝতে কোরআনের নূরে হৃদয় আলোকিত হয়।

কোরআন বুঝে পড়ুন

সবাই নিয়ত করি, আগামী রমজানের আগে একবার অন্তত পূর্ণ কোরআন অর্থসহ পাঠ করব। যেন আগামী রমজানে তারাবির সময় কোরআন শোনার সময় অন্তত কিছু বুঝতে পারি।

বছরব্যাপী নফল রোজা রাখুন
সিয়াম (রোজা) ছাড়বেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে বলেছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত, বরকত ও রুহানিয়াত অর্জনের জন্য নফল সিয়াম অতুলনীয় ইবাদত। যেমন-
১. প্রতি মাসে তিন দিন; বিশেষত প্রতি আররি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করা।
২. প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার।
৩. জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন।
৪. বিশেষত আরাফার (হজের) দিন।
৫. আশুরার (১০ মহররম) দিন এবং তার আগে বা পরে একদিন সিয়াম পালন করার অসীম ফজিলত ও সওয়াবের কথা বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি।
৬. রমজানের পরেই শাওয়াল মাস। ১ শাওয়াল আমরা ঈদুল ফিতর আদায় করি। ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী ২৮/২৯ দিনের মধ্যে ৬টি রোজা রাখার বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে। এরপর সে শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা পালন করবে, তার সারা বছর সিয়াম পালনের সাওয়াব হবে।’ (মুসলিম)।

ফরজসহ নফল নামাজ পড়ুন

কিয়াম (নামাজ) ছাড়বেন না। কিয়ামুল্লাইলের সওয়াব ও ফজিলত শুধু কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জমা করলেও বড় একটি গ্রন্থ হয়ে যাবে। যদি শেষ রাতে না পারেন তবে অন্তত প্রথম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, দুই-চার রাকাত নামাজ আদায় করবেন। বিভিন্ন বিশুদ্ধ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে-প্রতি রাতে, রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ বা ৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে, রাত ১০/১১টা থেকে দোয়া কবুলের ও রহমত-বরকতের সময় শুরু হয়। সারাদিন যে যেভাবেই কাটান না কেন, অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই-চার রাকাত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে সামান্য সময় আল্লাহর জিকির ও দরুদ পাঠ করে আল্লাহর দরবারে সারা দিনের গুনাহের ক্ষমা চেয়ে ও নিজের সব আবেগ আল্লাহকে জানিয়ে ঘুমাতে যাবেন।

আল্লাহকে ভয় করুন
তাকওয়া (আল্লাহর ভয়) ছেড়ে দেবেন না। রমজানের পরে ইবাদত-বন্দেগি কিছু কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে মুমিন ইচ্ছাকৃতভাবে পাপের পথে ফিরে যেতে পারেন না। তাহলে তো রমজানের সব পরিশ্রম বাতিল করে দেওয়া হলো। আর নিজের কষ্টে অর্জিত কর্ম নষ্ট করা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ বলেন-‘তোমরা সে (উন্মাদিনী) মহিলার মতো হয়ো না যে তার সুতা মজবুত করে পাকানোর পর পাক খুলে নষ্ট করে ফেলে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯২)। কষ্টের আমল রক্ষা করতে আমাদের রমজানের তাকওয়া রক্ষা করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে।

শিরক-কুফর থেকে মুক্ত থাকুন

এ ছাড়া কিছু বিষয় আছে যা মুমিনের জীবনের সব আমল ধ্বংস করে দেয়। তার অন্যতম হলো শিরক ও কুফর। আল্লাহর কোনো ক্ষমতায়, গুণ বা ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা হলো শিরক। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা, শিরকের মতোই মহাপাপ কুফর। যেমন- আল্লাহর দ্বিনের কোনো বিধান অচল মনে করা, উপহাস করা, ইসলামের কোনো বিধান অমান্য করা কারো কারো জন্য বৈধ হতে পারে বলে মনে করা ইত্যাদি।

আমরা যত পাপই করি না কেন, সব পাপের ক্ষমার আশা আছে। কিন্তু শিরক-কুফর পাপের কোনো ক্ষমার আশা নেই। আর শিরক ও কুফরের কারণে আগের সব নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। একজন মানুষ যদি নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ ও অন্যান্য ইবাদত পালন করে আবার পাশাপাশি মদ, জিনা বা অন্যান্য পাপে লিপ্ত হয়, তবে পাপের কারণে নামাজ বাতিল হবে না। পাপ ও পুণ্য উভয়ই জমা হবে। কিন্তু যদি কেউ শিরক করে তবে তার আগের সব ইবাদত বাতিল হবে। তাকে পুনরায় হজ ও অন্যান্য ইবাদত আদায় করতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন: ‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী করা হয়েছে যে, ‘তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৫)।

‘ইরশাদ হচ্ছে, ‘কেউ ঈমানের সঙ্গে কুফরি করলে তার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫)।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, নবী, ওলি ও ফেরেশতাগণ আল্লাহর অনুমতিতে সুপারিশ করবেন ঠিকই, তবে (যারা) শিরক-কুফরমুক্ত তাওহিদ ও ঈমান নিয়ে মরবেন শুধু তাদের জন্যই সুপারিশ করবেন। যারা শিরকে লিপ্ত হবে তাদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে না। আল্লাহ বলেন: ‘কেউ আল্লাহর শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করবেন ও তার আবাস জাহান্নাম; জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭২)।

আমরা রমজানে প্রতিদিন প্রায় ৭০ বার এবং সারা মাসে প্রায় ২ হাজার বার সুরা ফাতেহার মধ্যে আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি- ‘আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ আমরা বিপদে আপদে সব সময় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাহায্য চাইব। তবে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের  মাজারে যাবেন, মাজারস্থ ব্যক্তিকে জিরারত করতে, তাকে সালাম দিতে ও তার জন্য দোয়া করতে। আলিমদের কাছে যাবেন দ্বিন শিখতে। পিরের কাছে যাবেন আল্লাহর পথে চলার ও বেলায়াত অর্জনের পথ শিখতে। কিন্তু চাওয়া-পাওয়া, বিপদ-সাহায্য, ত্রাণ উদ্ধার এগুলো সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য।

আল্লাহ কখনোই বলেননি, বান্দা আমার কাছে দোয়া করতে তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। তিনি বলেছেন, বান্দা যেখানেই তুমি থাক না কেন, আমি তোমার কাছেই আছি। তুমি ডাকলেই আমি সাড়া দেব।

তিনি আরও বলেন, ‘আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো কাছেই। যখনই কোনো আহŸানকারী আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া প্রদান করি। কাজেই তারা আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার উপর বিশ্বাস রাখুক, তাহলে তারা ঠিক পথে থাকতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৬)।

মুমিন পাপী হতে পারে, তবে হৃদয়ের গভীরে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ওপর নির্ভরতা থাকতে পারে না। বিপদে আপদে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিদায় হজের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাসকে কী শিক্ষা দিয়েছেন; শুনুন- ‘হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিচ্ছি। তুমি আল্লাহকে হেফাজত করবে, তাহলে তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহকে (তোমার অন্তরে সদা জাগ্রত) সংরক্ষিত রাখবে, তাহলে তাঁকে সর্বদা তোমার সামনে পাবে। যখন চাইবে বা প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ! যদি সব মানুষ তোমার কোনো কল্যাণ করতে সম্মিলিত হয়, তাহলে তারা তোমার শুধু ততটুকুই কল্যাণ করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। আর যদি তারা সবাই তোমার অকল্যাণ করতে একজোট হয়, তাহলে তারা তোমার শুধু ততটুকুই অকল্যাণ করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার ব্যাপারে নির্ধারণ করেছেন। (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)।

মনে রাখা দরকার
রমজানের আমল বরবাদ হওয়ার আরেকটি বিষয় নামাজ। অনেকেই রমজানে রোজা রাখেন এবং নামাজ পড়েন, কিন্তু রমজানের পরে আর ফরজ নামাজ পড়েন না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে! কোরআন ও হাদিসে নামাজ পরিত্যাগ করাকে কুফরি বলা হয়েছে। সাহাবি-তাবেয়ীগণ অনেকেই এক ওয়াক্ত নামাজ পরিত্যাগ করাকেই কুফরি বলে গণ্য করতেন। অন্যরা বলেছেন যে, নামাজ ত্যাগ করা কুফরি না হলেও কুফরির গুনাহ। অর্থাৎ মদপান, শূকরের মাংস খাওয়া ও অন্য সব পাপের চেয়েও মহাপাপ হলো এক ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়া। আর যদি কেউ মনে করে যে, নামাজ না পড়েও ভালো মুসলমান থাকা যায়, তবে সে নিঃসন্দেহে কাফির হয়ে যায়।

মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য
আমরা চেষ্টা করব, সব সুন্নত-মুস্তাহাব পালন করে পরিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে। কিন্তু অসুবিধা হলে যতটুকু সম্ভব হাজিরা দিতে হবে। 
১. অজু না করতে পারলে তায়াম্মুম করে।
২. পবিত্র কাপড় না থাকলে নাপাক কাপড়।
৩. কাপড় না থাকলে উলঙ্গ হয়ে।
৪. কেবলামুখী হতে না পারলে যেদিকে মুখ করে সম্ভব।
৫. দাঁড়াতে না পারলে বসে, শুয়ে যেভাবে সম্ভব।
৬. সুরা-কেরাত বা দোয়া না জানলে শুধু আল্লাহু আকবার বা সুবহানাল্লাহ পড়ে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এতেই নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে কোনো অবস্থাতেই জ্ঞান থাকা অবস্থায় নামাজ কাজা করা যাবে না।

হাদিসে এসেছে- ফরজ নামাজ কাজা করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজও পরিত্যাগ করবে না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করবে, সে আল্লাহর জিম্মা ও তাঁর রাসুলের (সা.) জিম্মা থেকে বহিষ্কৃত হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, মাজমাউয যাওয়াইদ, তারগিব)।

দুর্ভাগ্য হবে যদি নাম কাটা যায়, নাম কাটা গেলে উম্মাত হিসেবে কোনো দাবিই থাকে না। ক্ষমা বা শাফায়াত লাভের আশাও করা যায় না। পরিশেষে, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান এবং জুমাতুল বিদায় কান্না ও ব্যাকুল মনে শান্তি ও মুক্তির মাসকে বিদায় জানাতে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাই আল বিদা মাহে রমজান, আল বিদা!

লেখক: ইসলামি চিন্তক, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

আরবি/এসআর

Link copied!