মুসলমানেরা বিশেষ কোনো বিপদে পড়লে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য কুনুতে নাজেলা পড়ার নিয়ম রয়েছে। শত্রুর থেকে রক্ষা, শত্রুর হেদায়েত কামনা অথবা তার ধ্বংস কামনার জন্য কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব আমলের অন্তর্ভুক্ত। তবে বিশেষ মুহুর্ত অর্থাৎ কঠিন বিপদ, যুদ্ধকালীন বা এমন বিপদ সংকুল পরিস্থিতিতেই শুধু কুনুতে নাজেলা পড়ার নিয়ম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সময় কুনুতে নাজেলা পড়েছেন। (সহীহ বুখারী-২/৬৫৫, তাহাবী শরীফ-১/১৭৪, সহীহ মুসলিম-১/২৩৭)
হানাফি মাজহাব মতে কাফের, মুশরিক ও জালেমদের পক্ষ থেকে বা আসমানি কোনো বিপদের মুখোমুখি হলে কুনুতে নাজেলা পড়া উচিত। (ফাতওয়ায়ে শামি, ২/৪৪৮-৪৪৯)
কুনুতে নাজেলা কখন পড়তে হয়
ফজরের নামাজের ফরজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে ইমাম আওয়াজ করে কুনুতে নাজেলা পড়বেন, এ সময় মুসল্লিরা আস্তে আস্তে আমিন বলবেন। দোয়া শেষে নিয়মানুযায়ী নামাজের অবশিষ্ট সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন। (এলাউস সুনান, ৬/৮১)
কুনুতে নাজেলা
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا ، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ.
বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মাগ ফিরলানা ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম, ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়াংসুরহুম আলা আদুওয়িকা ওয়া আদুওয়িহিম, আল্লাহুম্মাল আন কাফারাতা আহলিল কিতাবিল্লা জিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিকা, ওয়া ইউকাজজিবুনা রুসুলাকা, ওয়া ইউকাতিলুনা আওলিয়াআকা, আল্লাহুম্মা খালিফ বাইনা কালিমাতিহিম, ওয়া জালজিল আকদামাহুম, ওয়া আনজিল বিহিম বাসাকাল্লাজি লা তারুদ্দুহু আনিল কাওমিল মুজরিমিন, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুসনি আলাইকা ওয়ালা নাকফুরুক ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাই-ইয়াফজুরুকা।
আল্লাহুম্মা ইইয়াকা নাবুদু ওয়া লাকা নুসাল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া লাকা নাসআ, ওয়া নাহফিদু, নাখশা আজাবাকালঝাদ্দা, ওয়া নারজু রাহমাতাক। ইন্না আজাবাকা বিল কাফিরিনা মুলহিক।’
বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ, ক্ষমা করুন আমাদের এবং মুমিন নারী-পুরুষদের, আর মুসলমান নারী-পুরুষদের। তাদের অন্তরসমূহ জুড়িয়ে দিন আর তাদের মাঝে মীমাংসা করে দিন। তাদের সাহায্য করুন আপনার ও তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে। হে আল্লাহ, অভিসম্পাত বর্ষণ করুন কাফের সম্প্রদায়ের ওপর, যারা আপনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং যারা অস্বীকার করে রাসুলদেরকে আর যুদ্ধবিগ্রহ করে ওলিদের সাথে।
হে আল্লাহ, বিভেদ সৃষ্টি করে দিন তাদের ঐক্যের মাঝে এবং কম্পন সৃষ্টি করুন তাদের পদযুগলে আর নাজিল করুন এমন শাস্তি যা অপরাধী থেকে অপসারণ করা হয় না। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, হে আল্লাহ, আমরা আপনার নিকট সাহায্য এবং ক্ষমা চাই, সকল মঙ্গল আপনার দিকেই ন্যস্ত করি। আপনার অকৃতজ্ঞ হই না। যারা আপনার নাফরমানি করে আমরা তাদের পরিত্যাগ করে চলি।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব করি, আপনার জন্যে নামাজ পড়ি এবং আপনাকেই সিজদাহ করি। আমরা আপনার দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আপনার কঠিন আজাবকে ভয় করি এবং রহমতের আশা রাখি আর আপনার আজাব তো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত। (বা্ইহাকি, হাদিস: ২৯৬২)
আপনার মতামত লিখুন :