কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে হজরত ইব্রাহিম (আ.)- এর ত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্যের এক স্মরণীয় ঘটনার সঙ্গে। কোরবানি মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগের প্রতীক।
কোরবানির সূচনা: আদম (আ.)-এর দুই ছেলে
কোরবানির ধারণা সর্বপ্রথম এসেছে হজরত আদম (আ.)-এর যুগেই। তাঁর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিল আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করেছিলেন।
হাবিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবচেয়ে উত্তম পশু কোরবানি করেন, আর কাবিল দেন নিম্নমানের ফসল।
আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের কাছে আদমের দুই ছেলের কাহিনী সত্যের সঙ্গে বর্ণনা করো…।’ (সূরা মায়িদাহ: ২৭–৩১)
এখান থেকেই বোঝা যায়, আল্লাহ কাদের কোরবানি কবুল করেন- যারা তাকওয়ার সঙ্গে ভালো কিছু উৎসর্গ করে।
ইব্রাহিম (আ.)-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া
কোরবানির প্রকৃত ইতিহাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ যে ঘটনার মাধ্যমে এসেছে, তা হলো হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর ছেলে ইসমাইল (আ.)-এর আত্মত্যাগের ঘটনা।
এক রাতে হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখেন, তিনি তার ছেলে ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে জবাই করছেন। পর পর কয়েকবার এই স্বপ্ন আসায় তিনি বুঝলেন এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ।
তিনি ছেলেকে বললেন, ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখছি, তোমাকে জবাই করছি। তুমি কী মনে করো?’
ছেলে বললেন, ‘হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ (সূরা সাফফাত: ১০২)
যখন ইব্রাহিম (আ.) ছেলেকে শুইয়ে ছুরি চালাতে উদ্যত হন, তখন আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে একটি বড় দুম্বা পাঠিয়ে দেন। ছেলেকে না জবাই করে সে পশুকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ইব্রাহিম! তুমি স্বপ্নের সত্যতা প্রমাণ করেছ। নিশ্চয়ই এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। এবং আমি তার পরিবর্তে একটি মহান কোরবানি দান করলাম।’ (সূরা সাফফাত: ১০৪–১০৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোরবানি
হজরত মুহাম্মদ (সা.) কোরবানির এই সুন্নতকে জীবিত রেখেছেন এবং নিজের জীবনে কোরবানি করেছেন ও উম্মতকে তা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
হাদিসে এসেছে, ‘নবী (সা.) কোরবানি করতেন দুটি মোটা ও শিংওয়ালা সাদা-কালো ভেড়া, নিজ হাতে জবাই করতেন এবং ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোরবানির ইতিহাস শুধু একটি ইবাদতের ইতিহাস নয়, এটি আত্মত্যাগ, আল্লাহর আদেশ মান্যতা এবং তাকওয়ার পরীক্ষার এক অনন্য নিদর্শন।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর স্মরণে প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত কোরবানির এই সুন্নত পালিত হয়। এটি আমাদের শেখায়, আল্লাহর আদেশের সামনে নিজের ইচ্ছা বিসর্জন দেওয়াই প্রকৃত মুসলমানের পরিচয়।
আপনার মতামত লিখুন :