ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

রাস্তায় ও মাঠে জুমার নামাজ আদায় হবে কি?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৯:২২ এএম
নামাজরত মুসল্লি। ছবি- সংগৃহীত

মসজিদ ছোট হলে এবং মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হলে খোলা মাঠে ও রাস্তায় জুমার নামাজ আদায় করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো-সেটি শহর বা উপশহরের ভেতরে হতে হবে এবং জুমার অন্যান্য ফরজ শর্তসমূহ পূর্ণ হতে হবে।

সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে আলেমরা জানান, জুমার নামাজ সহিহ হওয়ার জন্য কেবল মসজিদ শর্ত নয়। নগরের খোলা স্থানেও জুমার নামাজ বৈধ। ইসলামী ফিকহে উল্লেখ রয়েছে-

কেননা জুমার নামাজ সহিহ হওয়ার জন্য মসজিদ শর্ত নয়। মাঠেও জুমা জায়েজ আছে। বলা হচ্ছে, والمسجد الجامع ليس بشرط، ولهذا أجمعوا على جوازها بالمصلى في فناء المصر.

অর্থ : আর জামেয় মসজিদ শর্ত নয়, এ কারণেই তারা নগরের খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করার বৈধতার ওপর ঐকমত্য হয়েছেন।

তবে, কাছাকাছি অন্য কোনো জামে মসজিদ থাকলে এবং সেখানে জায়গা সংকুলান হলে খোলা জায়গায় জুমা না পড়ে ওই মসজিদে গিয়ে জুমা পড়াই উত্তম হবে।

(আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ : পৃ. ৫৯, আলমাবসূত-সারাখসি ২/১২০, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৫০, আননাহরুল ফায়েক ১/৩৫২, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি : পৃ. ২৭৯)

উৎস : আল কাউসার

প্রসঙ্গত, জুমার নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো-

১. শহর বা উপশহর হতে হবে। গ্রামে বা জনমানবহীন বিরান স্থানে জুমার নামাজ শুদ্ধ হবে না।

২. জামাতে জুমার নামাজ পড়তে হবে। ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি হতে হবে। অর্থাৎ মোট চারজন ছাড়া জুমার নামাজ আদায় করা যাবে না।

৩. জোহরের সময় হতে হবে।

৪. সকলের জন্য নামাজে অংশগ্রহণের আম (সাধারণ) অনুমতি থাকতে হবে।

৫. খুতবা দিতে হবে।

গ্রাম বলতে এমন এলাকাকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিনিধি, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য নয়। এমন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে মূলত গ্রাম বলা হয়। সুতরাং আমাদের বাংলাদেশের প্রচলিত গ্রাম যেখানে রাষ্ট্র প্রতিনিধিসহ আবশ্যকীয় সুবিধা বিদ্যমান, সেটাকে গ্রাম বলা যাবে না। বরং তা উপশহরের স্থলাভিষিক্ত হবে।

তবে আলেমরা বলছেন, খাগড়াছড়ি, বান্দরবনের গহীন জঙ্গলে বসবাসকারীরা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের জুমার নামাজ পড়তে হলে এমন জায়গায় আসতে হবে, যেখানে জুমার জন্য উল্লিখিত শর্তগুলো পাওয়া যায়।

এক হাদিসে হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শহর ছাড়া জুমা ও ঈদের নামাজ নেই। (তাহাবি শরিফ :১১৫৪)

আরেক হাদিসে হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, গ্রামে জুমার নামাজ নেই। জুমা হবে শহরে। যেমন মাদায়েন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ৫০৬০)

উল্লেখ্য, সপ্তাহের সাত দিনের মাঝে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র, মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে জুমা। এই দিনটিকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। পৃথিবীতে সূর্য উদিত হওয়া দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং রাসুল (সা.) । শুধু তাই নয়, এই দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু করণীয়, যা পালন করলে মিলবে অপার সওয়াব ও পরকালীন সফলতা।

জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে কোরআন ও হাদিসে এসেছে অসংখ্য ফজিলতের বর্ণনা। তবে জুমার দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, আজানের সঙ্গে সঙ্গে আগেভাগে মসজিদে গমন করা। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে চলো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম—যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা জুমআ : ৯)

এই আয়াত আমাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা যে, আজান হওয়া মাত্রই দুনিয়াবি কাজকর্ম বাদ দিয়ে আল্লাহর ঘরে চলে যেতে হবে। শুধু নামাজ পড়লেই হবে না, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে পৌঁছানোই কাম্য। কেননা, রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে এমন এক পুরস্কারের কথা বলেছেন, যা কোরবানির সওয়াবের সঙ্গে তুলনীয়। সহিহ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, কে আগে মসজিদে গেলো, সে অনুযায়ী তার সাওয়াব নির্ধারিত হয়। কেউ পায় উট কোরবানির সাওয়াব, কেউ গরু, কেউ ভেড়া, আবার কেউ মুরগি কিংবা ডিম কোরবানির সাওয়াব!

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে এবং প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু কোরবানির সওয়াব, তৃতীয় প্রহরে গেলে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে গেলে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে গেলে ডিম কোরবানির সওয়াব পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে মিম্বারে ওঠেন, তখন ফেরেশতারা আর আমল লিখেন না, তারা খুতবা শুনতে থাকেন। (বোখারি : ৮৮১)