নামাজের জন্য পবিত্রতা একটি অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতিতে কখনো কখনো পোশাক পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। এমন অবস্থায় যদি জামায় প্রস্রাব লেগে যায়, তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, পুরো জামা পরিবর্তন না করে শুধু সেই অংশটুকু ধুয়ে নামাজ পড়া যাবে কি না? ইসলামের বিধান এই বিষয়ে খুবই স্পষ্ট এবং সহজ।
ইসলামের প্রধান চার মাজহাব হানাফি, শাফেয়ি, মালিকি ও হাম্বলি এ বিষয়ে একমত যে, নাপাকি দূর করার জন্য পুরো কাপড় ধোয়ার প্রয়োজন নেই। বরং, যে স্থানে নাপাকি লেগেছে, শুধু সেই অংশটুকু ভালোভাবে ধুয়ে নিলেই কাপড়টি পবিত্র হয়ে যাবে।
হানাফি মাজহাবের ইমাম কাসানি (রহ.) তার ‘বাদায়েউস সানায়ে’ গ্রন্থে বলেন, ‘নাপাকির স্থান ধোয়া যথেষ্ট, পুরো কাপড় ধোয়া বাধ্যতামূলক নয়।’ এখানে উল্লেখ্য যে তিনবার ধোয়া মোস্তাহাব (পছন্দনীয়) কিন্তু একবার ধুলেই যথেষ্ট। (১/১০৮)
শাফেয়ি মাজহাবের ইমাম নববি (রহ.) তার ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘নাপাকি দূর হওয়া পর্যন্ত ধোয়া জরুরি, ধোয়ার সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়।’ (২/৫৬০)
মালিকি মাজহাবের ইমাম দাসুকি (রহ.) তার ‘হাশিয়াতুদ দাসুকি’তে বলেন, ‘গন্ধ ও দাগ দূর করাই মূল উদ্দেশ্য।’ (১/৯৫)
হাম্বলি মাজহাবের ইবনে কুদামা (রহ.) ‘আল-মুগনি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘সম্পূর্ণ নাপাকি দূর হলেই পবিত্রতা অর্জিত হয়।’ (১/১৭০)
রাসুল (স.)-এর জীবনে এমন কিছু ঘটনা থেকে আমরা এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাই-
আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাপড় হতে মনী ঘষে উঠিয়ে ফেলতাম। অতঃপর তিনি ওই কাপড় পরিধান করে নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৭২)
একবার এক বেদুইন মসজিদে প্রস্রাব করলে রাসুল (স.) সাহাবিদের তাকে বাধা দিতে নিষেধ করেন এবং প্রস্রাব শেষে সেই স্থানে পানি ঢেলে তা পরিষ্কার করতে নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি: ২২০)
নাপাকি দূর করার জন্য শুধু পানিই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে সাবান বা অন্যকিছু ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়। পবিত্রতার জন্য মূল শর্ত হলো নাপাকির চিহ্ন (রং, গন্ধ বা স্বাদ) সম্পূর্ণ দূর করা। ধোয়ার পদ্ধতি হলো- চিহ্নিত স্থানে পরিষ্কার পানি ঢেলে ভালোভাবে ঘষে ধুতে হবে। একবার ধোয়ার পরই যদি নাপাকির চিহ্ন চলে যায়, তবে তা যথেষ্ট। তিনবার ধোয়া বাধ্যতামূলক নয়। কাপড় শুকানো আবশ্যক নয়। ভেজা অবস্থায়ও নামাজ পড়া যাবে, যদি নাপাকি সম্পূর্ণরূপে দূর হয়ে থাকে।
যদি সামান্য প্রস্রাব লাগে, তবে শুধু সেই অংশ ধুয়ে নামাজ পড়া যাবে। তবে যদি নাপাকি পুরো জামায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন পুরো কাপড় ধোয়া অথবা পরিবর্তন করাই উত্তম।
মোটকথা, ইসলামের বিধান মানুষের জন্য সহজ ও সুবিধাজনক। কোনো কারণে জামায় সামান্য প্রস্রাব লাগলে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। ইসলামের নির্দেশনা হলো, শুধু নাপাক অংশটুকু ভালোভাবে ধুয়ে পবিত্রতা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে সময়মতো নামাজ আদায় করা সম্ভব। তবে একজন মুমিন হিসেবে আমাদের সর্বদা পবিত্রতার প্রতি যত্নবান থাকা উচিত।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন