শুক্রবার মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন। ইসলামে এই দিনকে ‘সপ্তাহের সেরা দিন’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে জুমার দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। ইহুদিদের জন্য শনিবার ও খ্রিষ্টানদের জন্য রবিবার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু মোহাম্মদি উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনকে বরকতময় করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৪৭৩)
জুমার দিনের গুরুত্ব
নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শুক্রবার ফরজ গোসল করে, প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন উট কোরবানি করার সওয়াব পেল; দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু, তৃতীয় প্রহরে গেলে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে গেলে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে গেলে একটি ডিম কোরবানির সমান সওয়াব পাবে। আর যখন খতিব মিম্বারে উঠে যান, তখন ফেরেশতারা আর আমল লেখেন না, তারা খুতবা শোনেন। (সহিহ বোখারি : ৮৮১)
এমন বহু হাদিসে জুমার দিনের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে এসেছে।
শুক্রবারে মৃত্যু সম্পর্কে হাদিস
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন।’(তিরমিজি : ১০৯৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, কবর হলো আখিরাতের প্রথম ধাপ। যদি কেউ কবরের পরীক্ষায় সহজে উত্তীর্ণ হয়, তবে পরবর্তী ধাপগুলোও তার জন্য সহজ হবে। কিন্তু যদি কবরেই কষ্টে পড়ে, তবে পরবর্তী ধাপগুলো তার জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে। (তিরমিজি শরিফ)
আলেমদের বিশ্লেষণ
ইসলামী গবেষকরা বলেন, এই হাদিসে কবরের আজাব থেকে মুক্তির ইঙ্গিত থাকলেও এটি সরাসরি জান্নাতের নিশ্চয়তা নয়। মুল্লা আলী কারী (রহ.) তাঁর গ্রন্থ মিনাহুর রাওদিল আযহার এ লিখেছেন, ‘জুমার দিনে মারা গেলে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া প্রমাণিত। তবে কিয়ামত পর্যন্ত আর আজাব হবে না এমন দাবি করার সুযোগ নেই।’ (পৃষ্ঠা ২৯৫-২৯৬)
আধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে সময়ের মধ্যে কোনো মুসলিম মৃত্যুবরণ করবেন, তিনি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হবেন। তাকে কবরের ফিতনা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আর যদি কবরের আজাব থেকে মুক্তি পান, তাহলে কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশও সহজ হওয়ার আশা করা যায়।
হাদিস ও আলেমদের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করা একটি শুভ লক্ষণ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ রহমত, যার ফলে মৃত ব্যক্তি কবরের আজাব থেকে মুক্তি পান। তবে এটিকে সরাসরি জান্নাতের নিশ্চয়তা বলা যাবে না। মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত এমন মৃত্যুর জন্য দোয়া করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন