আজ শনিবার ১২ রবিউল আউয়াল, ইসলামের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস আজ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করছেন।
নবী করিমের (সা.) আগমন
৫৭০ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের মক্কা নগরের কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ জন্মের আগেই ইন্তেকাল করেন এবং ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। তবে অনাথ হয়েও তিনি এমন এক আলোকিত চরিত্রে বেড়ে ওঠেন, যিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন আরব সমাজকে সত্য, ন্যায় ও তাওহিদের আলোয় উদ্ভাসিত করেন।
তাঁর জীবনে সহিষ্ণুতা, বিনয়, দয়া, ক্ষমাশীলতা ও মানবিকতার সর্বোচ্চ রূপ ফুটে ওঠে। সমগ্র মানবজাতির জন্য তিনি ছিলেন রহমতস্বরূপ। ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে শান্তি, সাম্য ও ন্যায়ের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এজন্য তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকৃত।
মুসলিম উম্মাহর পালন
পবিত্র এ দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, নফল রোজা, দোয়া ও দান-খয়রাতের মধ্য দিয়ে মহানবী (সা.)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। দেশে-বিদেশে আয়োজিত হয় বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশও বিভিন্ন আলোচনা সভা ও বিশেষ ইবাদতের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের বাণী
দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আমাদের সবার জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঐক্যের বার্তা বয়ে আনুক। মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শ লালন করে আমরা ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লাভ করতে পারব।’
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁর বাণীতে বলেন, ‘মহানবী (সা.) মানবতার মুক্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর শিক্ষা আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘মহানবী (সা.) সমাজের দুর্বল, নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের আশ্রয়স্থল ছিলেন। নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, শিশুদের সুরক্ষা, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনুসরণীয়।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শকে খণ্ডিতভাবে গ্রহণ করা যাবে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর পূর্ণ জীবনাদর্শ অনুসরণ করলেই মানবতার কল্যাণ সম্ভব।’
জাতীয় প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
বাংলাদেশ একটি বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ। মহানবী (সা.) মদিনার সনদের মাধ্যমে ধর্মীয় সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা আজও বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে বিশেষ প্রাসঙ্গিক।
পারস্পরিক শ্রদ্ধা, দয়া, ক্ষমাশীলতা ও মানবিকতার চর্চার মাধ্যমেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারি-এমন শিক্ষা দেয় ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) কেবল একটি দিবস নয়; এটি মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শকে স্মরণ করার এবং তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের দিন। মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণই পারে মানবজাতিকে প্রকৃত শান্তি, ন্যায়বিচার ও মুক্তির পথে এগিয়ে নিতে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন