বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

কোরবানির আগে ১০ দিন চুল-নখ না কাটার তাৎপর্য

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

প্রতীকী  ছবি

প্রতীকী ছবি

কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। মূলত আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কোরবানি বলা হয়। আর্থিক ইবাদতসমূহের মধ্যে কোরবানির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

কোরবানির প্রস্তুতির সময় শরিয়াহর কিছু নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি, যাতে এই ইবাদতের পূর্ণতা ও তাৎপর্য বজায় থাকে।  এর মধ্যে একটি হলো, যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে চান, তাঁর জন্য জিলহজের প্রথম ১০ দিনে চুল-নখ না কাটা। এ সময় চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব (উত্তম)।

চুল-নখ কাটার বিধান কী

হজরত উম্মে সালামার (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজের নতুন চাঁদ দেখবে-অথবা ১০ দিন শুরু হবে- এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭; মুসনাদে আহমাদ; হাদিস: ২৬,৬৬১)

মুসনাদে আহমাদের অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তার চুল বা ত্বকের কিছুই স্পর্শ করা উচিত নয়।’

যে ব্যক্তি কোরবানি করবে না, তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না- এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, কোরবানি যারা করবে না, তাদের জন্যও এ আমল রয়েছে।

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.)-এর বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে কোরবানির দিবসে ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ এক সাহাবি বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, যদি আমার কাছে শুধু এমন একটি পশু থাকে যা দুধ পানের জন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে, আমি কি তা কোরবানি করব?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘না, তবে (দশ দিন পরে) তুমি চুল, নখ ও গোঁফ কাটবে এবং অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৭৮৯; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৪,৩৬৫)

এই নিষেধের কারণ

এই নিষেধের পেছনে একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। যে ব্যক্তি কোরবানি দেয়, সে হজের কিছু আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়, যেমন কোরবানি করা হজের অংশ। এই সময়ে চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকা ইহরামের কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা হজ পালনকারীরা মেনে থাকেন। এটি কোরবানিকারীর ইবাদতের প্রতি নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ।

এই নিষেধ শুধু সেই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যিনি নিজে কোরবানি জবাই করবেন। যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে, যেমন পরিবারের সদস্য বা অন্য কেউ, তাদের ওপর এই নিষেধ প্রযোজ্য নয়।

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কোরবানি দিতে চায়…’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৭)। এখানে ‘যে কোরবানি দিতে চায়’ বলতে জবাইকারী ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যার পক্ষে কোরবানি দেওয়া হচ্ছে তাদের নয়। রাসুল (সা.) নিজে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতেন, কিন্তু তাদের চুল বা নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই কোরবানিকারীর পরিবারের সদস্যরা জিলহজের প্রথম দশ দিনে চুল, নখ বা ত্বক কাটতে পারেন।

সুন্নাহ পালন করতে চাইলে জিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে জিলহজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত, যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়।

তবে এই বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়। কেননা, হাদিসে আছে, আনাস (রা.) বলেন, গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিষয়ে আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে আমরা যেন ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব না করি। (সহিহ মুসলিম ১/১২৯; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলালমারাকি ২৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৯৬)

কেউ চুল বা নখ কেটে ফেললে

যদি কোরবানি দেওয়ার নিয়তকারী ব্যক্তি জিলহজের প্রথম ১০ দিনে চুল, নখ বা ত্বকের কোনো অংশ কেটে ফেলেন, তবে তাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

শায়খ ইবনে বাজ বলেছেন, এই ক্ষেত্রে কোনো কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও চুল বা নখ কাটা কোরবানির বৈধতার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কিছু মানুষের ভুল ধারণা থাকলেও এটি কোরবানিকে অগ্রহণযোগ্য করে না।

তবে এই বিধান তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়।

তবে যদি কেউ ভুলে বা শরিয়াহর নিয়ম না জেনে চুল বা নখ কাটেন, তবে তার ওপর কোনো গুনাহ হবে না। যদি চুল বা নখ অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়ে যায়, তবে এতে কোনো দোষ নেই। যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, যেমন নখ ভেঙে গিয়ে ব্যথা বা অসুবিধা সৃষ্টি করছে, চোখে চুল পড়ে সমস্যা হচ্ছে, অথবা ক্ষতের চিকিৎসার জন্য চুল কাটা প্রয়োজন, তবে তা কাটা জায়েজ। এই ক্ষেত্রে কোনো গুনাহ হবে না।

সুন্নাহ পালন করতে চাইলে জিলকদ মাসেই চুল-নখ কেটে জিলহজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। যাতে তা বেশি লম্বা হয়ে না যায়, যা সুন্নাত পরিপন্থি। আর যদি কেউ জিলহজের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে কোনো দিন কোরবানি দেওয়ার নিয়ত করে, তবে নিয়ত করার মুহূর্ত থেকে তার চুল, নখ বা ত্বক কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!