কুরবানী মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধুমাত্র পশু জবাই করার নাম নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের ভালোবাসার কিছু ত্যাগ করার নাম। কুরবানী আমাদের আত্মত্যাগ, তাকওয়া এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক। ইসলামে কুরবানী একটি সুন্নাতে ইব্রাহিমি যা কেয়ামত পর্যন্ত কায়েম থাকবে।
কুরবানীর সময় যে দোয়াটি পড়া হয়
কুরবানী দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করা হয়, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত। এই দোয়াটি হলো:
আরবি:
بِسْمِ اللهِ، اللهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ
উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা হা যা মিংকা ওয়া লাকা।
বাংলা অনুবাদ:
“আল্লাহ্র নামে, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। হে আল্লাহ! এটা তোমার পক্ষ থেকে এসেছে এবং তোমার জন্যই উৎসর্গ করছি।”
এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চাই যে কুরবানীর পশুটি আমাদের সম্পত্তি হলেও, আমরা তা আল্লাহরই জন্য উৎসর্গ করছি।
কুরবানীর সময় দোয়া পড়ার সঠিক নিয়ম
- কুরবানী করার সময় নিম্নোক্ত নিয়ম মেনে দোয়া পড়া উত্তম:
- কুরবানী শুরুর আগে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে ছুরি চালাতে হবে।
- দোয়ার পর পশুকে জবাই করতে হবে।
- জবাইয়ের সময় কেবলামুখী হওয়া সুন্নাত।
- পশুকে অকারণে কষ্ট না দিয়ে শান্তভাবে জবাই করতে হবে।
পুরুষ এবং নারী উভয়েই নিজ নিজ পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারেন। তবে নারীদের জন্য নিজ হাতে জবাই না করে কাউকে দায়িত্ব দেওয়াই উত্তম।
রাসূল (সা.)-এর আদর্শ ও আমল
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর নিজ হাতে কুরবানী করতেন এবং তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও কুরবানী করতেন। হাদীসে এসেছে, তিনি বলতেন:
“হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী।” (মুসলিম)
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, কুরবানীর সময় দোয়া করা এবং নিয়ত প্রকাশ করা সুন্নাত।
কুরবানীর সময় দোয়া না পড়লে করণীয়
যদি কেউ ভুলে দোয়া না পড়ে কুরবানী করে ফেলে, তবে কুরবানী বৈধ হয়ে যাবে, তবে দোয়া পড়া সুন্নাত ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন দোয়া না ভুলি। যারা কুরবানী দেন না, শুধু কুরবানীর অর্থ দেন বা দায়িত্ব দেন, তারাও নিয়ত করে দোয়া পড়ে নিতে পারেন।
শিশুদের ও পরিবারের সাথে কুরবানী করার সময় দোয়া শেখানো
কুরবানীর এই মহান ইবাদত শিশুদের শেখানোর উত্তম সুযোগ। ছোটদের কুরবানীর উদ্দেশ্য ও দোয়া মুখস্ত করানো যেতে পারে মিষ্টি ও গল্পের মাধ্যমে। পরিবারের সবাই মিলে দোয়া পড়া, তাকবির বলা ও ইবাদতের আবহ সৃষ্টি করলে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা জাগে।
কুরবানী ও আত্মত্যাগের বার্তা
কুরবানীর দোয়ায় রয়েছে আত্মত্যাগের অসাধারণ বার্তা। “হা যা মিংকা ওয়া লাকা”— অর্থাৎ, “এটা তোমার দেওয়া, আবার তোমার জন্যই উৎসর্গ করছি।” এই কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর দেওয়া, আর আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তা আল্লাহর রাহে খরচ করা, ইখলাসের সাথে।
কুরবানীর দোয়া কেবল কিছু শব্দ নয়, বরং একটি শক্তিশালী নিয়তের প্রকাশ, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের ভালোবাসার কিছু বিলিয়ে দেওয়ার নাম। আমাদের উচিত কুরবানীকে শুধুমাত্র সামাজিক বা আনুষ্ঠানিক কাজ হিসেবে না দেখে, তাকওয়া ও ইবাদতের দৃষ্টিতে দেখা।
আপনার মতামত লিখুন :