ঈদ হোক, পূজা কিংবা কোনো খুশির খবর, বাংলার মানুষ মিষ্টি ছাড়া আনন্দ কল্পনাই করে না। অতিথি আপ্যায়ন কিংবা আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার সময় হাতে যদি থাকে মিষ্টির প্যাকেট, তবে সম্পর্কেও যেন বাড়তি মিষ্টতা যোগ হয়।
আর এই মিষ্টির রাজ্যে এক নতুন নাম যোগ হয়েছে, ‘ইলিশ পেটি’ মিষ্টি। স্বাদে অনন্য, নামেও চমকপ্রদ। যার আকৃতি দেখে অনেকেই ভুল করে ফেলেন, মনে হয় যেন আসল ইলিশ মাছের পেটি!
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামের ‘অগ্র সুইটস্ ভিলেজ’ নামের একটি ছোট্ট কারখানায় তৈরি হয় এই ব্যতিক্রমী মিষ্টি। কারখানার মালিক গিয়াস উদ্দিন একজন এমবিএ ডিগ্রিধারী যুবক।
চাকরির পেছনে না ছুটে তিনি নিজ গ্রামেই গড়ে তুলেছেন একটি ডেইরি ফার্ম ও দুধভিত্তিক মিষ্টির কারখানা। তার কারখানাতেই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু এই ইলিশ পেটি মিষ্টি, যা এখন কেবল গোপালগঞ্জ নয়, অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
মিষ্টিটির আকৃতি এতটাই নিখুঁত যে দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি আসল ইলিশ নয়! ইলিশ মাছের পেটি যেমন দেখতে হয়, তেমন করেই দুধের খিরকে আকার দেওয়া হয় এই মিষ্টিতে। মাঝখানে দেওয়া হয় ডিমের মতো অংশও, যা কিনা মাছপ্রেমীদের চোখেও ধাঁধা লাগিয়ে দেয়।
বিশুদ্ধ গরুর দুধ থেকে ঘন খির তৈরি করে এই মিষ্টির মূল উপাদান তৈরি করা হয়। গিয়াস উদ্দিন জানান, খাঁটি দুধ তার নিজের ডেইরি ফার্ম থেকেই আসে। বড় কড়াইয়ে দীর্ঘক্ষণ নাড়াচাড়া করে তৈরি হয় ঘন খির। সেই খির শক্ত হলে হাতে সুতার মতো টেনে টেনে কেটে নেওয়া হয় ইলিশ পেটির মতো আকারে। এই মিষ্টির একেকটি খণ্ড যেন শিল্পকর্ম!
ইলিশ পেটি মিষ্টির স্বাদে রয়েছে দুধের ঘনত্ব, ঘ্রাণ আর একধরনের দারুণ মোলায়েম টেক্সচার।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রসূন বিশ্বাস, বাদল সাহা ও মুরাদ আলি বলেন, ‘এই দোকানের মিষ্টি এখন শুধু বেড়াতে গেলেই নয়, বরং বাড়িতে অতিথি এলেও কিনে আনা হয়। ইলিশ পেটি এখন কাশিয়ানীর পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কারখানা মালিক গিয়াস উদ্দিন বলেন, অন্যান্য মিষ্টির চেয়ে ইলিশ পেটির নাম, রূপ আর স্বাদে ভিন্নতা থাকায় মানুষ আগ্রহ নিয়ে অর্ডার করছেন। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ মণ মিষ্টি অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই মিষ্টি ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে, যা অনেকের জন্যই সুবিধাজনক।
মাত্র তিন বছর আগে গিয়াস উদ্দিন শুরু করেন এই উদ্যোগ। উচ্চশিক্ষিত হয়েও শহরমুখো না হয়ে নিজ গ্রামকে বেছে নিয়েছেন কর্মক্ষেত্র হিসেবে। তার এই উদ্যোগ বদলে দিয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি, তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান, আর ‘ইলিশ পেটি’ মিষ্টি হয়ে উঠেছে কাশিয়ানীর এক অনন্য পরিচয়।
আপনার মতামত লিখুন :