শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৩:২২ এএম

থমথমে এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, পুরুষশূন্য গ্রাম

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৫, ০৩:২২ এএম

নিহতের বাড়ির সামনে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নিহতের বাড়ির সামনে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংস হত্যার ঘটনায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ী গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছেন এলাকার পুরুষেরা। 

এলাকাজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া থানায় মামলাও হয়নি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন ডেকে এনে ওই গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, মাদকসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে এনে এলাকাবাসীকে ক্ষেপিয়ে তুলে নৃশংস এ ঘটনা ঘটানো হয়। 

নিহত তিনজন হলেন কড়ইবাড়ী গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তার ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। 

এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)। বৃহস্পতিবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে নিহতদের দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না কড়ইবাড়ীতে। বাঙ্গরা বাজার থানার পুলিশের সহযোগিতায় গ্রাম পুলিশ দিয়ে খোঁড়া হচ্ছে কবর।

মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিহত রোকসানাদের বাড়ি। সেখানে বাজারের মতো অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করায় গতকাল এলাকার বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

কড়ইবাড়ী গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ঘটনার দিন রোকসানার বাড়ির সামনে অন্তত ১ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। যাদের বেশির ভাগই এলাকার যুবক শ্রেণির। এ জন্য এখন বেশির ভাগ বাড়ি পুরুষশূন্য। সবাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন টহল দিচ্ছেন।

মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান শুক্রবার জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তারা কুমিল্লা থেকে এজাহার লিখে এনে জমা দেবেন। ঘটনার পর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন পুরুষেরা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

ওসি বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদকসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও এখন সবাই জামিনে ছিলেন। যারাই নেতৃত্ব দিয়ে এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি জানান, এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 

এদিকে কুমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। কাজ শেষ হলে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

একটি মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগের জের ধরে নৃশংস এই ঘটনার সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছিল।

স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার এলাকার একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় এক শিক্ষকের মুঠোফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন নামের এক তরুণ মুঠোফোনটি চুরি করেছেন। বোরহান নিহত রোকসানার মেয়ে তাসপিয়ার স্বামীর সঙ্গে কাজ করেন। এ ছাড়া এলাকাবাসী তাকে রোকসানার খুচরা মাদক বিক্রেতা হিসেবে চেনেন।

মুঠোফোন চুরির অভিযোগে বোরহানকে আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় ব্যবসায়ী বাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে রোকসানা বোরহানকে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে বাচ্চু ও বাছিরদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। 

এরপর বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও সদস্য বাচ্চু মিয়া। এ সময় তাদের সঙ্গে বাগ্্বিতণ্ডায় জড়ান রোকসানা বেগম ও তার মেয়েরা। একপর্যায়ে রোকসানা মুঠোফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাচ্চু মিয়াকে একটি চড় মারেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধা ঘণ্টার মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে এলাকায় উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। 

কিছু সময় পর মাইকে ঘোষণা দিয়ে আশপাশের শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে রোকসানা ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। বাছিরের নেতৃত্বে হামলা করে প্রথমে রোকসানার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসাকে সামনে এনে উসকে দিয়ে হামলা করা হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। গুরুতর আহত হন একজন। রোকসানার স্বামী ও আরেক মেয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে যান।

নিহত রোকসানার ছেলে রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার বলেন, বাছির নেতৃত্ব দিয়ে পুরো হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন। বাছিরের পরিবারের অনেক লোকজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের ইন্ধনে বাছির নেতৃত্ব দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। চেয়ারম্যান ঘটনার আগের দিনও এসেছিলেন কড়ইবাড়ী। ঘটনার দিন সকালে তিনি এখানেই ছিলেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বার পুরো ঘটনায় জড়িত। তারাই যুক্তি করে আমার স্বামীর পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। আমি তাদের বিচার চাই।

ঘটনার পর থেকেই ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া ও বাছির এলাকাছাড়া। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ। ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ঘটনার আগের দিন ওই এলাকায় গিয়ে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে নিষেধ করেছিলেন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে আমি চলে যাই। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর এ ঘটনা শুরু হয়েছে বলে জেনেছি।’ 

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, রোকসানার পরিবার মাদকের কারবারে জড়িত। এ জন্য এলাকার লোকজন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

গ্রাম পুলিশ দিয়ে খোঁড়া হচ্ছে কবর : এদিকে নিহতদের দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না কড়ইবাড়ীতে। বাঙ্গরা বাজার থানার পুলিশের সহযোগিতায় গ্রাম পুলিশ দিয়ে খোঁড়া হচ্ছে কবর।

গতকাল সন্ধ্যায় সরেজমিন কড়ইবাড়ী কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায় তিনজন গ্রাম পুলিশসহ চারজনে তিনটি কবর খোঁড়ার কাজ করছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত লাশ নিয়ে এলাকায় পৌঁছায়নি নিহতদের স্বজনেরা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্ত শেষ হলেও শুক্রবার দুপুর নাগাদ নিহতদের লাশ গ্রহণ করতে যায়নি কেউ। বিকেলের দিকে নিহত রোকসানার মেয়েজামাই মনির হোসেন লাশ  গ্রহণ করেছেন।

Shera Lather
Link copied!