ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

হলুদ গুঁড়ার ছোট্ট পরীক্ষা, ভাইরাল রিল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০৭:১০ এএম
ছবি- সংগৃহীত

আলো নিভে যায়। ক্যামেরা থামে। ভেসে ওঠে এক বাটি পানি, তাতে ধীরে ধীরে মিশে যায় এক চিমটি হলুদের গুঁড়া। তারপর... ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে এক রহস্যময় হলুদাভ মেঘ। না, এটি কোনও বিয়ের হলদি অনুষ্ঠান নয়। এটি এখনকার সময়ের এক নতুন বিজ্ঞান-নাট্য বা ট্রেন্ড, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে রং, ভাব, এবং বার্তা।

এই সহজ পরীক্ষাটিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তৈরি হয়েছে শত শত ইনস্টাগ্রাম রিল, ফেসবুক রিলস। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে শ্রেয়া ঘোষাল ও সোনু নিগমের মিষ্টি গলায় ২০০৭ সালের বিখ্যাত গান ‘ম্যাঁয় যদি কাহুঁ’। গানের আবেগের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে পানিতে গুলে ওঠা হলুদের সোনালি ধারা। মুহূর্তেই বিজ্ঞান হয়ে উঠছে কাব্য, যেখানে মিশে আছে বিজ্ঞান, রোমান্স, নান্দনিকতা আর ভালোবাসা শেখার উপাদান।

যখন হলুদের বিজ্ঞান হয়ে ওঠে অনুভব

হলুদ পুরোপুরি পানিতে মিশে না, কারণ এটি এক সাসপেনশন তৈরি করে। অর্থাৎ, হলুদের ছোট কণাগুলো পানিতে ভাসতে থাকে, যা একধরনের ঘোলা, মেঘলা মিশ্রণ তৈরি করে। এটি একটি সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষা হলেও, এখন তা হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ার এক আবেগঘন ট্রেন্ড, যা সবাই নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করছে।

তবে দেখতে যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনি শিক্ষনীয়। ছোটদের জন্য এটি হতে পারে চমৎকার একটি হোম সায়েন্স প্রজেক্ট দ্রবণ আর সাসপেনশনের পার্থক্য বোঝার সহজ উপায়। আর বড়দের জন্য? এটি যেন জীবনের প্রতীক অর্থাৎ সবকিছুই মিশে যায় না, কিন্তু সহাবস্থান তৈরি করে এক ভিন্ন সৌন্দর্য।

হালকা কৌতুক, হালকা বিজ্ঞান

এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই। যেমন বাবা-মেয়ে জুটি অভিজিৎ পাল ও ছোট্ট মেহু। তারা হলুদের এই পরীক্ষা করতে গিয়ে এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন যে, মেহুর মা সঙ্গীতা হেসে (ক্যাপশনে) বলেন, ‘পিওভি: হলদি ট্রেন্ড ভুল হয়ে গেছে!’ একটি কৌতুক, যার ভেতরেও লুকিয়ে আছে শিক্ষার রং।

সৌন্দর্যপ্রেমী নীলাঞ্জনা ধর এই পরীক্ষাকে রূপ দিয়েছেন এক শিল্পে। কাঁচের বোতলে ঢালা হলুদের ঘূর্ণন দেখে তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিটি রঙের ভেতরেও থাকে বিজ্ঞান, শুধু চোখ খুলে দেখতে জানতে হয়।’

এই রিলগুলো প্রমাণ করে, বিজ্ঞান কেবল ল্যাবরেটরির বিষয় নয়, বরং তা জীবন, সম্পর্ক আর সৃজনশীলতার অংশ হতে পারে। ছোট একটি সাসপেনশন পরীক্ষাই ছড়িয়ে দিতে পারে বড় উপলব্ধি—যেখানে রঙ, পানি ও আবেগ একসঙ্গে তৈরি করে নতুন এক নান্দনিকতা।

হলুদের মতো যা মিশে না, কিন্তু ভাসে, ছড়িয়ে পড়ে, রঙ আনে—এই রিলগুলোও যেন আমাদের মনে ছড়িয়ে দিচ্ছে এক অদৃশ্য শিক্ষা; মানে জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তেই লুকিয়ে থাকে বিস্ময়, কৌতূহল আর কবিতা।

এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছে কেবল সাধারণ ব্যবহারকারীরা নয়, শিক্ষক, বিজ্ঞানপ্রেমী, এমনকি শিল্পী ও লেখকরাও। কেউ বলছেন, ‘এটাই বিজ্ঞানের প্রকৃত সৌন্দর্য’, আবার কেউ বলছেন, ‘হলুদের মতোই ছড়িয়ে যাক জ্ঞানের রং’। তবে হলুদ তো শুধু রং নয়, তা এক সংবেদন, যা বিজ্ঞানে মিশে হয়ে ওঠে কাব্য।