ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

যেসব আসনে দাঁড়াতে পারেন বড় দলের শীর্ষ নেতারা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
যেসব আসনে দাঁড়াতে পারেন বড় দলের শীর্ষ নেতারা। ছবি- সংগৃহীত

২০২৫ সালের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার শরিক রাজনৈতিক দলগুলো সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার আগেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি জোটভিত্তিক কৌশল নির্ধারণ ও প্রার্থী বাছাইয়ে গতি এনেছে। দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই জোটকে ঘিরেই মূল রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর পর লন্ডনের নির্বাসন থেকে দেশে ফিরছেন।  প্রথমবারের মতো তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাই তাকে নিয়ে মানুষের ব্যাপক কৌতূহল।

তেমনই কৌতূহল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে। অসুস্থ খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা মানুষের জানার খুব আগ্রহ। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান কয়টি আসনে এবং কোথায় নির্বাচন করছেন, এটারও খোঁজ নিচ্ছেন কৌতূহলী মানুষ। তার নেতৃত্ব ইতোমধ্যে সবার চোখে পড়েছে। তরুণদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচনে কেমন করবেন, তা নিয়েও মানুষের প্রবল আগ্রহ রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম সারির অন্তত ১০টি দলের শীর্ষ নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। বেশির ভাগ নেতাই নিজ এলাকায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় দল আওয়ামী লীগ আপাতদৃষ্টিতে অংশ নিতে পারছে না। গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করেছে। তবে দলটির অনেক নির্দোষ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে এবার জোটবদ্ধ বা আসন সমঝোতার মাধ্যমে অংশ নিতে পারে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। সে ক্ষেত্রে জামায়াতসহ কোনো কোনো দল দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করলেও পরে কিছু রদবদল হতে পারে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রার্থী হবেন কি না- তা এখনো নিশ্চিত নয়।

তবে দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, একটি আসন থেকে তাকে প্রার্থী করা হতে পারে। সেটি ঢাকা কিংবা ফেনীর আসন। আর তিনি প্রার্থী হলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ওই আসনে নিজেদের প্রার্থী না-ও দিতে পারে এমন আভাসও পাওয়া গেছে। পৈতৃক এলাকা ফেনী-১ আসনটি থেকে বিজয়ী হয়ে এরই মধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং দুবার বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে অংশ নিলে এবারও এই আসন থেকে প্রার্থী হবেন তিনি।

এ ছাড়া দলের মধ্যে আলোচনা আছে, ফেনীতে প্রার্থী না হলে তিনি ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান ও বনানী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন থেকেও প্রার্থী হতে পারেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ম্যাডাম নির্বাচন করবেন কি না সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ম্যাডামের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন। আমাদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোন আসন ও কয়টি আসন থেকে নির্বাচন করবেন, এটা সারা দেশের মানুষের প্রচণ্ড আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের এ আগ্রহ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে এ বিষয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আসন সম্পর্কে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

তাদের বক্তব্য, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি একান্তই তারেক রহমানের নিজস্ব বিষয়। আগে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন, নির্বাচনের সামগ্রিক অবস্থা সরেজমিন দেখবেন, তারপর নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি তো প্রার্থী হবেনই। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। তারেক রহমানই চমক। তবে কোন কোন আসনে তিনি নির্বাচন করবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান এখন ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি জোট করা, ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা ঠিক করা এবং একটি প্রাণবন্ত সংসদ গঠন করার ক্ষেত্রে সহযোগী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছা যায়, সেটা ঠিক করা। দলের ভালো ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে তিনি দেশব্যাপী একটি নির্বাচনি জরিপকাজ চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে একটি সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তারেক রহমান সহসাই দেশে ফিরছেন। আসন্ন নির্বাচনে খালেদা জিয়া এবার নির্বাচনি গণসংযোগ করতে পারবেন না। দেশব্যাপী এই গণসংযোগ তারেক রহমানকেই করতে হবে।

বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, জিয়া পরিবার থেকে ধানের শীষ নিয়ে এবার পাঁচটি আসনে নির্বাচন করা হতে পারে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ছাড়াও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান প্রার্থী হতে পারেন। তবে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান কিংবা মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন।

নির্বাচন কমিশনের আইনে আছে, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি আসনে নির্বাচন করতে পারবেন। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে তারেক রহমানের কাছে ইতোমধ্যে অনুরোধ গেছে।

এ তিনটি আসন হলো- গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসন, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট-গুলশান-বনানী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন এবং সিলেট-১ আসন। বগুড়ার গাবতলী তারেক রহমানের গ্রামের বাড়ি, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট তার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠার স্মৃতিবিজড়িত এলাকা।

আর সিলেট-১ আসনটি নিয়ে বলা হয়ে থাকে, ‘যে দল সিলেট-১ আসনে বিজয়ী হবে, ওই দল সরকার গঠন করবে।’ তাই এ আসনে নির্বাচন করার জন্য সিলেটবাসী তারেক রহমানকে চাচ্ছেন। তা ছাড়া সিলেট হচ্ছে তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি। তার শ্বশুর সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান।

বিএনপির বাইরে বড় দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সব আসনে প্রার্থী ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসন (মিরপুর) থেকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইতোমধ্যে তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার বক্তব্য মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। বিশেষ করে তার সাম্প্রতিক বক্তব্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে।

তিনি বলেছেন, একাত্তরই শুধু নয়, ১৯৪৭ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যত মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন, সেসব মানুষের কাছে আমি বিনা শর্তে ক্ষমা চেয়েছি। এ বক্তব্য মানুষকে খুশি করেছে।

ডা. শফিকুর রহমান দুটি নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ, দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকসহ বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি ঢাকা-১৫ আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ঢাকা ছাড়াও নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনেও প্রার্থী হতে পারেন জামায়াত আমির।

যদিও মৌলভীবাজার-২ আসনে এরই মধ্যে দলটির মৌলভীবাজার জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার সাহেদ আলীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জামায়াত আমির নিজ এলাকায় কয়েক দফা সফর করেছেন। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি। এ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন সমাবেশে ও পথসভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। এতে অনেকের ধারণা, এই আসনেও প্রার্থী হতে পারেন ডা. শফিকুর রহমান।

দলীয় প্রধানের প্রার্থিতা সম্পর্কে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, জামায়াতপ্রধানকে ঢাকা-১৫ আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। মৌলভীবাজার-২ আসনে প্রার্থীর ব্যাপারেও সাধারণ মানুষের দাবি আছে।

জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এ দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাজধানী ঢাকার দুটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আসন দুটি হচ্ছে ঢাকা-৯ (সবুজবাগ-মতিঝিল) ও ঢাকা-১১ (বাড্ডা-রামপুরা)।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিজ এলাকার আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, এবার তিনি প্রার্থী নাও হতে পারেন। কিছুদিন আগে কর্নেল অলি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিএনপির গ্রিন সিগন্যাল পেলে তিনি প্রার্থী হতে রাজি হতে পারেন। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে তিনি বিএনপিতে ফিরছেন। বিএনপি তাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগাতে পারে। এবার তার ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এর আগে অলি আহমদের স্ত্রী নির্বাচন করেছেন। এবার তার স্ত্রী নির্বাচন করবেন না।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রাজনীতিতে এখন অনেকটা কোণঠাসা। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি চিহ্নিত। গত ১৫ বছর জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হয়ে কাজ করেছে। তবে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। দলীয় প্রধান হিসেবে জি এম কাদের রংপুর সদর আসনে প্রার্থী হবেন।

বগুড়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিএনপির সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের নির্বাচনি ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ফেনী-২ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জনসাধারণের সমস্যার কথা শুনছেন। সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে যেসব দল যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, সেসব দলের সবাই নিজ নিজ জেলার আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের নির্বাচন করবেন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসন থেকে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স নির্বাচন করবেন খুলনা-২ আসন থেকে। সিপিবির সভাপতি শাহ আলম নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবারও নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে তার ভাই দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে অংশ নেন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যে ১০টি ইসলামি দল জোটবদ্ধ হচ্ছে, তার মধ্যে চরমোনাই পীরের দল অন্যতম বড় দল।

এ আসনে জামায়াত তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না। এ ছাড়া সর্বশেষ মুফতি ফয়জুল করীম বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য মুফতি ফয়জুল করীম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক ১২-দলীয় জোট। এই জোটের অন্যতম প্রধান দল জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপিও দলীয় নেতাকর্মীদের চিঠি দিয়েছে, যাতে গণসংযোগ এবং তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সহযোগিতা করা হয়।

এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন থেকে কিশোরগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিজ জেলা পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে পটুয়াখালী-৩ আসনে জনসংযোগ এবং তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে নির্বাচনি আসনের থানা, উপজেলা, পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেয় বিএনপি।

তবে পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান মামুন। ওই আসনে সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী। তাই শেষ পর্যন্ত নুরুল হক নুর ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ নির্বাচন করবেন নিজ জেলা ভোলার সদর ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে।

তিনি জানান, এ দুটি আসনে আমি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। বিএনপির সঙ্গে তার দলের ঐক্য রয়েছে। ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ জন্য নিজ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় প্রধান হিসেবে একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া তাদের জোটের সবাই নিজ নিজ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এখনো নির্বাচন করার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি। তবে দলের পক্ষ থেকে তাকে দুটি আসনে প্রার্থী করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী নিজ এলাকা টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

তিনি বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দুদিন পর নেবেন দলে আলোচনার পর। গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করবেন না। তবে তার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-ওয়ারী-বংশাল) আসনে নির্বাচন করবেন।

জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রধান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নির্বাচন করবেন কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ভোট করবেন পিরোজপুর-২ আসন থেকে। এর আগেও তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ওই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। এ জন্য দলটির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ নির্বাচন করবেন হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনি প্রচারসহ গণসংযোগ শুরু করেছেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একাংশের সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক নির্বাচন করবেন সিলেট-৫ আসন থেকে। নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক প্রচারকাজ চালাচ্ছেন তিনি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আরেক অংশের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী নির্বাচন করবেন না। তবে দলটির মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম কুমিল্লা-৬ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তারা বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদেরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে দলটির নির্বাহী দায়িত্বশীল হিসেবে মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী দুটি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এবং কুমিল্লা-২ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ জন্য প্রাথমিক তৎপরতা চলছে বলে সাখাওয়াত হোসাইন জানিয়েছেন।

ইসলামী ঐক্যজোটের আরেক অংশের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব নির্বাচন করবেন সিলেট-৬ আসন থেকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেছিলেন বলে জানান দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ইলিয়াস আতহারী।

খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বটগাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন ঢাকা-২ আসন থেকে। এ জন্য এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজী নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে দলটির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান পঞ্চগড়-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তাসমিয়া শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে। আর জাপগার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তিনি তাসমিয়ার ভাই।