ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

এনসিপির নামে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রচার 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির লোগো। ছবি- সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে আজ (২ আগস্ট) জানানো হয়েছে, আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লেটারপ্যাডে ‘জুলাই সনদ অধিকারনামা’ শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা  ভুয়া বলে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলো হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো:

১. ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণে এবং জনগণের সমর্থনে যে আন্দোলন হয়েছে তা বাংলাদেশের ‘২য় স্বাধীনতা’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

২. জুলাই আন্দোলনে একমাত্র নেতৃত্বদানকারী হলো নাহিদ, আসিফ, হাসনাতসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে আন্দোলন পরবর্তী ছাত্রদের গঠিত দল ‘এনসিপি’-কে আন্দোলনের মূল নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

৩. এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের বিপ্লবী ছাত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়ে, ভবিষ্যতে তাদের সব কর্মকাণ্ডকে (আইনসিদ্ধ বা আইনবহির্ভূত) রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে বাধ্য থাকিবে। 

৪. জুলাই আন্দোলন তথা ২য় স্বাধীনতাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা দিতে হবে এবং এই আন্দোলনে শহীদ ও যোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার সমান স্বীকৃতি ও সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

৫. আন্দোলনের মূল নেতা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আখতার হোসেন, মাহফুজ আলম, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে জুলাই আন্দোলনের ৭ জন ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আন্দোলনের সব সমন্বয়ককে ‘বীরবিক্রম’ উপাধি দিতে হবে। 

৬. আন্দোলনের আহত, নিহতের পরিবারের সদস্য, অংশগ্রহণকারী, বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীরবিক্রমের পরিবারের সদস্য সবাইকে সরকারি চাকরিতে বিশেষ সুবিধা দিয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

 ৭. জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে এনসিপির জন্য পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০টি আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির লেটারপ্যাডে প্রচারিত ‘জুলাই সনদ অধিকারনামা’ শীর্ষক প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি আসল নয়। বরং এনসিপির নাম ও লোগো ব্যবহার করে এই ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা যাচাই করতে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে খোঁজ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে সেখানে এমন কোনো বিজ্ঞপ্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে দলটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত অন্যান্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তির (১,২,৩,৪,৫) সঙ্গে আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, কথিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি’ লেখার বাঁ পাশে এবং লেখার মূল অংশে এনসিপির লোগো ব্যবহৃত হয়েছে। তবে দলটির মূল বিজ্ঞপ্তিগুলোতে সাধারণত কোনো লোগো ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়া মূল বিজ্ঞপ্তিগুলোতে স্মারক বা সূত্র নম্বর এবং তারিখ উল্লেখ থাকলেও আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটিতে সে ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আলোচিত বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। এ ছাড়া দলটির ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্টে বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে বলা হয়, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির প্যাডে এমন একটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির বরকন্দাজরা। এটি মিথ্যা, অসত্য ও ভুয়া বিজ্ঞপ্তি। আমরা এমন কোনো বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করিনি।

সুতরাং জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির লেটারপ্যাডে প্রচারিত ‘জুলাই সনদ অধিকারনামা’ শীর্ষক প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া ও বানোয়াট।