শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০১:১২ এএম

মাদকের নগরী ঢাকা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০১:১২ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তিলোত্তমা নগরী ঢাকা এখন মাদকের নগরীতে রূপ নিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে গেছে মাদক। মারণনেশার ভয়াল থাবা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও হিমশিম খাচ্ছে মাদকের আগ্রাসন রুখতে। প্রতিদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জেলা হয়ে রাজধানীতে বানের পানির মতো ঢুকছে মাদকের বড় বড় চালান। কিছু অসাধু রাজনীতিক ও প্রশাসনের সদস্যদের ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট মাদক পৌঁছে দিচ্ছে নগরীর সর্বত্র।

ঢাকায় বস্তিকেন্দ্রিক মাদক বিক্রেতার সংখ্যা বেশি বলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে। বৃহত্তর মোহাম্মদপুর এলাকা হলো রাজধানীর মাদকের আস্তানা। সাম্প্রতিক সময়ে এ এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযানে শতাধিক বিক্রেতা গ্রেপ্তার হয়েছে, তবুও থেমে নেই তারা।

কৌশল পরিবর্তন করে আবারও নেমে পড়েছে মাদক বেচাকেনায়। ঢাকায় যেসব মাদক বিক্রি হয়, তার একটি বড় অংশ ভেজাল। ভেজাল মাদক সেবন করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ ছাড়া মাদকাসক্তদের দ্বারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, গুম ও খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্তভাবে।

জানা গেছে, এক সময় ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ফেনসিডিল ঢুকত। এরপর ফেনসিডিলের জায়গা দখল করে নেয় হেরোইন। আর এখন দেশে ইয়াবার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবার চেয়ে ভয়ংকর মাদক ‘আইস’ দেশে ঢুকছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। তবে দেশে ৩২ ধরনের মাদক সেবন হয় বলে একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। ঢাকায় যেসব মাদক পাওয়া যায় তার ৮৫ শতাংশই ভেজাল। সহজে অর্থ অর্জনের জন্য হয় নকল করছে অথবা ভেজাল মেশাচ্ছে। ফলে মাদকাসক্তরা নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের জনগোষ্ঠী বড় অংশ কিশোর-তরুণ। বাংলাদেশে ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে। অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূম পান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও আট শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুরা মাদক সেবন করে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে।

মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশে নারীদের মধ্যে মাদকের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা বাড়ছে। কয়েকটি মাদক নিরাময়কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আর্থিক নিরাপত্তা ভোগ করা পেশাজীবী নারীদের অনেকেই ঝুঁকছেন মাদকের দিকে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মাদকসেবী কিশোরীর সংখ্যা। গৃহবধূরাও হচ্ছেন মাদকাসক্ত।

ঢাকা নগরীতে মাদকের বেশির ভাগই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে। এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ নামে পরিচিত মাদক চোরাচালানের তিনটি প্রধান অঞ্চলের কেন্দ্রে বাংলাদেশের অবস্থান। তাই আন্তর্জাতিক মাদককারবারিরাও বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে সহজে ব্যবহার করতে পারছেন। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে শত শত নদ-নদী দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। মাদক চোরাকারবারিরা সমুদ্র উপকূল ও জলপথকে তাদের পণ্য পাচারের খুবই উপযুক্ত পথ হিসেবে বিবেচনা করেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদকের রুট।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখেরও বেশি। যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশই হচ্ছে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। বিশালসংখ্যক মাদকাসক্তের মধ্যে আবার প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু-কিশোর সঙ্গদোষ ও বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে, ৩৭ শতাংশ কৌতূহলবশত মাদক সেবনের মাধ্যমে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদক গ্রহণের কারণে মাদকাসক্তরা নানা ধরনের জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জীবনীশক্তি ধ্বংসকারী ইয়াবা সেবনকারীরা অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলছে চিরতরে। তা ছাড়া মাদকাসক্তদের অনেকেই ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন নেশাদ্রব্য প্রয়োগ করে। আর সে জন্য অনেক সময় একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করে। যার ফলে এইডসের মতো সংক্রামক রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাদক বেচাকেনা হচ্ছে। অভিযানে শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ সেসব মাদকদ্রব ধরা পড়ছে। গ্রেপ্তারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা সহজেই জামিনে মুক্ত হওয়ায় তারা আবার মাদককারবারে জড়িয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় মাদকাসক্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর অভিজাত বা বস্তি এলাকার অলিগলি সবখানেই মাদকের বিষাক্ত নেশা ছড়িয়েছে। নগরীর অনেক স্থানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন এবং বিক্রি হচ্ছে। মূলত গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ কর্মবিরতিতে চলে যায়, পরে কাজে ফিরলেও আগের মতো ফর্মে নেই। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা। নগরীর এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কাজে লাগিয়ে মাদক আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। আর বিক্রেতাদের টার্গেট কর্মক্ষম যুবসমাজ। উন্নত প্রযুক্তির যুগে ফোন বা ইন্টানেটে অর্ডার দিলেই মাদক বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমানে মাদকের প্রসারের পাশাপাশি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

 ঢাকার স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও মাদক পৌঁছে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসে শিক্ষা অর্জনের জন্য ও শৈশব থেকে তাদের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। কিন্তু শঙ্কার বিষয়, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয় না। ফলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরাপদে মাদক গ্রহণের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিণত হচ্ছে। এখানে বহিরাগতরা নিরাপদে মাদক সেবনের জন্য ভিড় করে। ক্যাম্পাসে অবাধে মাদকের বিচরণ সাধারণ শিক্ষার্থীকে মাদক সেবনের প্রতি প্রভাবিত করে। 
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাদক উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহকারী এই জায়গাগুলো বন্ধ করা না গেলে মাদকের বিস্তার কমানো যাবে না। মাদক সরবরাহের চেইন সম্পূর্ণ বন্ধ করারও কোনো বিকল্প নেই। দেশের ভেতরে যাতে মাদক সরবরাহ করা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মাদকের মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। সর্বোপরি মাদক বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক নির্মূলে সবার সম্মিলিত চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির অসাধু সদস্য মাদক পাচারে জড়িত। প্রতিদিন বাহিনীগুলোর হাতে ধরা পড়ছে খুচরা মাদক ব্যবসায়ী ও ছোট ছোট চালান। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় কুশীলবরা।

গ্রেপ্তারের পর সিন্ডিকেটের সদস্যদের দ্বারা কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও যুক্ত হয়ে যায় একই কারবারে। সমাজের প্রভাবশালীরা ঢাকার মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের আইনের আওতায় আনতে পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের তথ্য মতে, ঢাকার সংঘটিত বেশির ভাগ অপরাধের পেছনে রয়েছে মাদক। মাদক সরবরাহে বাহক হিসেবে এখন নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক তরুণী মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূম পান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও আট শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুরা মাদক সেবন করে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশে নারীদের মধ্যে মাদকের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা বাড়ছে। কয়েকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আর্থিক নিরাপত্তা ভোগ করা পেশাজীবী নারীদের অনেকেই ঝুঁঁকছেন মাদকের দিকে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মাদকসেবী কিশোরীর সংখ্যা। গৃহবধূরাও হচ্ছেন মাদকাসক্ত।
ঢাকার অভিভাবকের দাবি, নগরীবাসীকে মাদকের এই নীল দংশন থেকে বাঁচাতে হলে গড়ে তুলতে হবে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বেসরকারি সংগঠন এনজিও, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম বা অন্যান্য ধর্মের বিশিষ্টজন, পিতা-মাতা, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। সরকারকে বাধ্য করতে হবে, যাতে তারা মাদক সিন্ডিকেট ধ্বংস করে দেয় এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির মধ্যে আনে।

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!