বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৫, ০১:৪১ এএম

সেই নাফিজ সরাফাতের বাড়ি জমি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৫, ০১:৪১ এএম

সেই নাফিজ সরাফাতের বাড়ি জমি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামে থাকা ২২টি ফ্ল্যাট, দুটি বাড়িসহ সব প্লট ও জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।

অভিযুক্ত নাফিজ, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা ও ছেলে রাহিবের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সরকার পরিবর্তনের পরে তারা পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের সম্পদ জব্দের আদেশ দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেন সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নাফিজ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।

আদালতে জমা দেওয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাফিজ সরাফাত পরিবারের যে সম্পদ ক্রোকের আদেশ হয়েছে তার মধ্যে নাফিজের নামে গুলশানে ২০ তলা একটি বাড়ি রয়েছে। তার ফ্ল্যাট রয়েছেÑ গুলশানে একটি, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকায় চারটি, নিকুঞ্জ উত্তর আবাসিক এলাকায় একটি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ। প্লট রয়েছে নিকুঞ্জে দুটি, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১০ কাঠা করে দুটি, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সাড়ে ৭ কাঠার একটি। এ ছাড়া বাড্ডার কাঠালদিয়ায় আড়াই কাঠা, গাজীপুর সদরে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, জোয়ার সাহারায় ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি রয়েছে তার।

নাফিজের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সাহিদের নামে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে সাত কাঠা জমির ওপর চারতলা বাড়ি, পান্থপথে একটি, গুলশান লিংক রোডে একটি, মিরপুর ডিওএইচএসে একটি, শাহজাদপুরে একটি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ।

এ ছাড়া তার নামে নিকুঞ্জে তিন কাঠা জমি, বাড্ডার কাঠালদিয়ায় আড়াই কাঠা নাল (আবাদি) জমি ও গাজীপুর সদরে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ চালা (উঁচু) জমি রয়েছে। তাদের ছাড়াও ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সরাফাতের নামে থাকা বনানীর তিনটি ও বারিধারার চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

প্রবল গণজোয়ারে ভেসে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভাইস্তা’ চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের অর্থ পাচার সম্পর্কে আগেই তথ্য প্রকাশ করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (সিআইডি)। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ১৩ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি।

পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফত সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট পিএলসির মালিকানাতেও যুক্ত। তার বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান দলের প্রধান সংস্থার উপপরিচালক মাসুদুর রহমান বিতর্কিত ব্যবসায়ী নাফিজ সরাফাত ও তার পরিবারের এসব স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আবেদন করেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। 

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুদক অনুসন্ধান শুরু করার পর নাফিজ সরাফাত ও তার পরিবারের সদস্যদের সব স্থাবর সম্পত্তি অন্যদের কাছে হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাতের প্রচেষ্টা চালানো হয়। সে কারণে এসব সম্পত্তি জব্দ করা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নাফিজ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি গত বছরের গত ১৬ আগস্ট নাফিজের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেরও অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গত সরকারের আমলে আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাওয়া নাফিজ সরাফতের পুঁজিবাজারের বিও হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত হোটেল ব্যবসা, বিদ্যুৎ, মোবাইলের টাওয়ার, মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন গত এক দশকে। অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। সে সময় চাপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরের বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফারমার্স ব্যাংকের নাম হয় পদ্মা ব্যাংক।

নাফিজ সরাফাতের উত্থান
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন খাতের অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন নাফিজ সরাফাত। শুরুতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। পরে তার সখ্য গড়ে ওঠে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার সুসম্পর্কের চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

গোপালগঞ্জের এই ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ‘ফুফু’ বলে সম্বোধন করতেন। আর সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছিলেন তার ‘চাচা’। গোপালগঞ্জের মানুষ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ‘কাজিন’ হিসেবে অন্যদের কাছে পরিচয় দিতেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ১৯৯৯ সালে চাকরিজীবন শুরু করে মাত্র ১৩ বছরেই হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি।

তার আগেই চৌধুরী নাফিজ একটি মিউচুয়াল ফান্ডের লাইসেন্স নেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে। এরপরে বাংলাদেশ রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট নামক একটি কোম্পানি খোলেন। যেখানে তার মালিকানা ২৫ শতাংশ। বাকি মালিকানা অন্য অংশীদার হাসান ইমামের। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত জুন থেকে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের তহবিলগুলোর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে।

আরও অধিকতর যাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন করে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। মাত্র ১৩ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন খাতে অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি হন নাফিজ।

আরবি/জেডআর

Link copied!