ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নতুন করে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গুজরাট ও রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারেরও বেশি সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। এদের অনেককেই কোনো আনুষ্ঠানিক আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক (জোর করে ফেরত পাঠানো) করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভারত এই কার্যক্রমকে পুশব্যাক বললেও বাংলাদেশ একে দেখে পুশইন হিসেবে-অর্থাৎ অন্য দেশের ভূখণ্ডে জোর করে অনুপ্রবেশ ঘটানো। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় এ প্রক্রিয়া গোপনে চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্দেহভাজনদের আটক করে জেরা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং সেখান থেকেই তাদের সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই প্রক্রিয়াকে বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী বলে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, এটি শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পুলিশ বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুশব্যাক প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে কর্মকর্তাদের অনানুষ্ঠানিক বক্তব্য অনুযায়ী, প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
শিশু ও মানব পাচারের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে মানবিক বিবেচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়। এসব ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করে বৈধ প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের পুশইন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানিয়েছে। সীমান্তে এ ধরনের আচরণকে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক ও বিতর্কিত চর্চা হিসেবেই রয়ে গেছে।
পুশব্যাক বা পুশইন যেভাবেই অভিহিত করা হোক না কেন, বিষয়টি এখন কেবল সীমান্তের সমস্যা নয়, বরং একটি মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনগত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :