নামাজ ইসলামের অন্যতম মৌলিক ইবাদত, যা প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। সময়মতো ও নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করায় রয়েছে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি, শৃঙ্খলা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং তাতে রয়েছে বেশি সওয়াব। তবে কেউ যদি গ্রহণযোগ্য কারণে জামাতে শরিক হতে না পারে, তাহলে সে ঘরে একাকী নামাজ আদায় করতে পারে এবং সময় চলে গেলে কাজা নামাজ পড়তে হয়।
তবে জুমার নামাজের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। এটি শুধু জামাতের মাধ্যমেই আদায়যোগ্য এবং কিছু নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে তা ফরজ হয়। ইমামসহ অন্তত তিনজন পুরুষ মুসল্লি না থাকলে বা অন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না হলে জুমার পরিবর্তে জোহরের নামাজ আদায় করতে হয়। তাই মুসলমানদের উচিত নামাজের গুরুত্ব ও শর্ত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে তা যথাযথভাবে পালন করা।
অনেকের ধারণা মসজিদ ছাড়া অন্য জায়গায় জুমার নামাজ আদায় করা যায় না। বিষয়টি এমন নয়। বরং জুমার জন্য যেসব শর্ত রয়েছে তা পাওয়া গেলে মসজিদের বাইরে অন্যান্য খোলামেলা জায়গা বা মাঠেও জুমার নামাজ পড়া যাবে। জুমার নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—
১. শহর বা উপশহর হতে হবে। গ্রামে বা জনমানবহীন বিরান স্থানে জুমার নামাজ শুদ্ধ হবে না।
২. জামাতে জুমার নামাজ পড়তে হবে। ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি হতে হবে। অর্থাৎ মোট চারজন ছাড়া জুমার নামাজ আদায় করা যাবে না।
৩. জোহরের সময় হতে হবে।
৪. সবার জন্য নামাজে অংশগ্রহণের আম (সাধারণ) অনুমতি থাকতে হবে।
৫. খুতবা দিতে হবে।
গ্রাম বলতে এমন এলাকাকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিনিধি, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য নয়। এমন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে মূলত গ্রাম বলা হয়।
সুতরাং আমাদের বাংলাদেশের প্রচলিত গ্রাম যেখানে রাষ্ট্র প্রতিনিধিসহ আবশ্যকীয় সুবিধা বিদ্যমান, সেটাকে গ্রাম বলা যাবে না। বরং তা উপশহরের স্থলাভিষিক্ত হবে।
তবে খাগড়াছড়ি, বান্দরবনের গহীন জঙ্গলে বসবাসকারীরা গ্রামের বাসিন্দা। তাদের জুমার নামাজ পড়তে হলে এমন জায়গায় আসতে হবে, যেখানে জুমার জন্য ওপরে উল্লেখিত শর্তগুলো পাওয়া যায়।
হজরত আলী (রা.) বলেছেন, শহর ছাড়া জুমা ও ঈদের নামাজ নেই। (তাহাবী শরিফ, হাদিস :১১৫৪)
আরেক হাদিসে হজরত হুজাইফা রা. বলেন, গ্রামে জুমার নামাজ নেই। জুমা হবে শহরে। যেমন মাদায়েন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস : ৫০৬০)
ইসলামী আইন ও ফিকাহশাস্ত্রবিদরা বলেন, জুমার নামাজ ও পাঞ্জেগানা নামাজ সবই জামাতের সঙ্গে শরয়ী মসজিদে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। কোনো কারণ ছাড়া মসজিদের বাইরে অন্য কোথাও পড়া উচিত নয়।
আর জুমার নামাজের বিশেষত্ব হলো, এ নামাজে জামাত অপরিহার্য। জামাত ছাড়া জুমা হয় না। তবে জুমার জন্য মসজিদ জরুরি, মসজিদ ছাড়া, খোলা জায়গা বা মাঠে জুমা হয় না এ কথা ঠিক নয়।
বরং যেখানে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিনিধি, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য এমন জায়গায় মসজিদ ছাড়াও অন্য জায়গায় জুমার নামাজ পড়া যাবে।
‘আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য গোটা ভূপৃষ্ঠকে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫২২)
আপনার মতামত লিখুন :