আইপিএলের শিরোপা জয়ের দৌড়ে সবসময় যাদের রাখা হয়, প্রথম সারিতে তাদের মধ্যে অন্যতম চেন্নাই সুপার কিংস।
আইপিএলের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলে আসছিল চেন্নাই। তবে ১৮ বছরের ইতিহাসে চেন্নাই সুপার কিংস এবার পড়েছে শোচনীয় অবস্থায়।
সবার আগে ছিটকে গেল আসর থেকে। বলা যেতে পারে, বয়স ও নিলামের কাছেই ধরা খেল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
আইপিএলের ইতিহাসে চেন্নাই কেবল চতুর্থবারের মতো এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। এ ব্যর্থতার কারণ কী? বিশ্লেষণে সবার আগে উঠে আসে বয়স ও বোলিং ব্যর্থতা।
বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই বড় শট খেলার প্রতিযোগিতা। যে দল যত বেশি বড় শর্ট খেলবে তারা তত বেশি রান তুলতে সক্ষম হবে। কিন্তু চেন্নাই সুপার কিংস যেন এদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে।
এবারের আসরে চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা ছক্কার তালিকায় পেছনের সারিতে রয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই তাদের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকিয়েছে লখনৌ সুপার জায়ান্টস, এরপর রয়েছে পাঞ্জাব কিংস, রাজস্থান রয়্যালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
এসব দলের তুলনায় চেন্নাইয়ের ছক্কা অনেক কম।
এবারের আসরে চেন্নাইয়ের ব্যর্থতার আরেকটি কারণ বোলিং। রবীন্দ্র জাদেজা ও আফগান স্পিনার নূর আহম্মেদ ছাড়া বল হাতে তেমন কেউই নেই ছন্দে। অভিজ্ঞ স্পিনার অশ্বিনও নেই তার চিরচেনা ফর্মে।
এ বছর চেন্নাইয়ের পেস আক্রমণও বেশ দুর্বল। গত আসরগুলোতে সামনে থেকে পেস ইউনিটের নেতৃত্বে দিতেন দীপক চাহার।
তাকে ভাবা হতো ধোনির প্রধান হাতিয়ার! কিন্তু এবার নিলামে চেন্নাই তাঁকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ আসরে চেন্নাই হয়তো মিস করছে বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকেও। গত আসরে মুস্তাফিজ ৯ ম্যাচে ২৩-এর কম গড়ে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন, ইকোনমি ছিল ৯.২৬।
কিন্তু চলতি আসরে চেন্নাইয়ের পেস বোলিং বিভাগের অবস্থা বেশ শোচনীয়।
চেন্নাইয়ের মূল পেসার খলিল আহমেদ ৮ ইকোনমিতে রয়েছেন মোটামুটি ফর্মে। কিন্তু অন্য পেসারদের অবস্থা অনেক খারাপ।
মাথিশা পাথিরানা, মুকেশ চৌধুরী, ইংলিশ পেসার স্যাম কারান ও জেমি ওভারটনরা তাদের চিরচেনা ফর্মে নেই।
অপরদিকে, চেন্নাইয়ের পারফরম্যান্সে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বয়স! এ আসরে চেন্নাইয়ের তীরে যারা ‘নীড়’ বেঁধেছেন, তাদের অনেকেরই বয়স অবসরের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে।
মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা, রবীচন্দন অশ্বিন, কিউই তারকা ডেবন কনওয়েসহ আরও অনেকে রয়েছেন, যাদের বয়স ৩৪-৩৫-এর উপরে।
টি-টোয়েন্টিতে বর্তমান সময়ে কম বয়সী তারকাদের আনাগোনা হলেও ‘বুড়োদের’ প্রতিই আস্থা রখেছিল চেন্নাই, সেখানেই খেল বড় ধরা। সবার আগে ছিটকে পড়ল আসর থেকে।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সাধারণত মেগা নিলামে পরবর্তী তিন বছরের জন্য স্কোয়াড গড়ে নেয়। কিন্তু টুর্নামেন্টটির অন্যতম সফল দল চেন্নাই সুপার কিংস সেখানেই হেরে গেছে বলেও ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন।
সেই মন্তব্য যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ মাঠের পারফরম্যান্স। ঘরের মাঠে চেন্নাই টানা সর্বোচ্চ পঞ্চম হারের রেকর্ড গড়েছে।
চলতি আসরে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই হেরেছে চেন্নাই। যা আসরের প্রথম দল হিসেবে ধোনি-জাদেজাদের বিদায় নিশ্চিত করল।
তারা এখন আর প্লে-অফের দৌড়ে নেই। এ নিয়ে টানা দুই মৌসুমেই লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে চেন্নাই।
সব মিলিয়ে আইপিএলে সর্বোচ্চ পাঁচবারের শিরোপাধারী ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একাধিক লজ্জার নজির গড়েছে।