টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। অনেকটা আবেগঘন এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নিজের টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিরাটের উঠে আসাটা অনেকটা রুপকথার গল্পের মতই।
এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকে (বিসিসিআই) নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে রেখেছিলেন কোহলি। যদিও বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা তাকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন, তবে তাতে রাজি হননি কোহলি।
বিরাট কোহলি যেভাবে ক্রিকেটে আসলেন
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম—বিরাট কোহলি। ব্যাট হাতে যিনি একের পর এক রেকর্ড গড়ে দিয়েছেন, তিনিই আজকের দিনে একজন আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড়। তবে তার এই শীর্ষে ওঠার গল্পটা শুরু হয়েছিল একেবারে সাধারণ পথ ধরে।
বিরাট কোহলি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৮ সালের ৫ নভেম্বর, দিল্লির এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় আগ্রহী ছিলেন তিনি। মাত্র নয় বছর বয়সে ভর্তি হন পশ্চিম দিল্লির ‘ওয়েস্ট দিল্লি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।’ সেখানে কোচ রাজকুমার শর্মার অধীনে শুরু হয় তার ক্রিকেট জীবনের আনুষ্ঠানিক পথচলা।
ছোটবেলা থেকেই কোহলি ছিলেন পরিশ্রমী, নিবেদিত এবং দৃষ্টান্তমূলক ফোকাসড। স্কুল জীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেটকে সময় দিয়েছেন পূর্ণ উদ্দীপনায়। দিল্লির হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে নজর কাড়েন নির্বাচকদের।
তবে বিরাট কোহলির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ২০০৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সেবার ভারতের অধিনায়ক হিসেবে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন তিনি। ওই টুর্নামেন্টের পরেই তার প্রতিভা নজরে আসে বিসিসিআই ও আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর।
একই বছরই তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দলে যোগ দেন আইপিএলে।
২০০৮ সালের আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় বিরাট কোহলির। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক ম্যাচে রান করে গেছেন, গড়েছেন ইতিহাস।
কোহলির ক্রিকেট যাত্রা প্রমাণ করে, পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর লক্ষ্য ঠিক থাকলে যেকোনো সাধারণ ছেলেও হয়ে উঠতে পারে ক্রিকেট দুনিয়ার 'কিং কোহলি'।
অবসর নিয়ে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে যা লিখলেন রান মেশিন খ্যাত এই তারকা
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে কোহলি লেখেন, ‘১৪ বছর আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নীল ব্যাগি টুপি পড়েছিলাম। সত্যি বলতে, তখন জানতাম না এই ফরম্যাট আমাকে কতদূর নিয়ে যাবে। এটি আমাকে তৈরি করেছে, শিক্ষা দিয়েছে। এই শিক্ষা সারা জীবন বহন করব।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত গভীরতা আছে—শান্ত পরিবেশ, দীর্ঘ সময়ের খেলা, ছোট ছোট মুহূর্ত—যা হয়তো অনেকেই দেখে না। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো চিরকাল আমার সঙ্গেই থাকবে।’
ভারতের হয়ে ১২৩টি টেস্ট খেলেছেন কোহলি। ৪৬.৮৫ গড়ে তার রান সংখ্যা ৯ হাজার ২৩০। করেছেন ৩০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি ফিফটি। লাল বলের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুদিন ধরেই চিন্তাভাবনায় ছিলেন কোহলি।
বিশেষ করে গত নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হওয়া বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির পারফরম্যান্সের পর সেই ভাবনা আরও দৃঢ় হয়। ওই সিরিজে ৯ ইনিংসে কোহলি করেছিলেন মাত্র ১৯০ রান, গড় ছিল ২৩.৭৫।
কোহলির পারফরম্যান্স ঘিরে তখনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তার টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় তাকে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই অবশেষে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে টেস্ট ক্রিকেটকে ‘গুডবাই’ জানালেন বিরাট কোহলি।
আপনার মতামত লিখুন :