শমিত সোমের ফুটবল উত্থান বিদেশের মায়া কাটিয়ে, শেকড়ের টানে বাংলায়! কানাডার সবুজ প্রান্তর থেকে বাংলার সবুজ গালিচায় পা রেখেছেন এক স্বপ্নচারী ফুটবলার, শমিত সোম।
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেশের জার্সি গায়ে জড়াতে প্রস্তুত এই মিডফিল্ডার। তার আগমন যেন বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে নতুন করে রোমান্সের জন্ম দিয়েছে। এ যেন এক কাব্যিক প্রত্যাবর্তন, যেখানে প্রবাসের সাফল্য আর অভিজ্ঞতার সুবাস মিশে যাচ্ছে মাতৃভূমির ভালোবাসার সাথে।
১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কানাডার এডমন্টনে জন্মগ্রহণ করা শমিত সোমের ফুটবল ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। তার বাবা-মা সিলেট থেকে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিলেন, তাই শেকড়ের টান তার কাছে বরাবরই প্রবল। তরুণ বয়স থেকেই ফুটবলের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ছিল এবং তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে কানাডার অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
শমিত ২০১৬ সালে তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন এনএএসএল-এর ক্লাব এফসি এডমন্টনের হয়ে। এরপর ২০১৭ সালে তিনি কানাডিয়ান মেজর লিগ সকার ক্লাব মন্ট্রিয়ল ইমপ্যাক্টে (বর্তমানে সিএফ মন্ট্রিয়ল) যোগ দেন।
এমএলএস-এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লিগে খেলাটা তার ক্যারিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। মন্ট্রিয়ল ইমপ্যাক্টের হয়ে তিনি ২০১৯ মৌসুমে একটি গোলও করেন, যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। মূলত নিউ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৯ সালে মন্ট্রিয়ল ইমপ্যাক্টের হয়ে তিনি এই গোলটি করেন।
মন্ট্রিয়লের পর তিনি আবার এফসি এডমন্টনে ফিরে আসেন এবং কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি ফোর্থ এফসি এবং ২০২৩ সাল থেকে ক্যাভালরি এফসিতে খেলছেন। ক্যাভালরি এফসির হয়ে ২০২৪ সালে তিনি কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছেন।
কানাডার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-২০ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে খেলার পর, ২০২০ সালে শমিত কানাডার সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে দুইটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। বার্বাডোস এবং আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচগুলো তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এবার তিনি ফিফার এককালীন দলবদলের নিয়ম মেনে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি।
এটিকে ভুটান ম্যাচে মাঠে নামতে না পারলেও গ্যালারিতে বসে দলের খেলা দেখেছেন শমিত। সতীর্থদের পারফরম্যান্স তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি এখন দলের সাথে মানিয়ে নিতে এবং সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে বদ্ধপরিকর। তার ড্রিবলিং, বল কন্ট্রোল এবং মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
আগামী মঙ্গলবার (১০ জুন) ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দেশের মাটিতে এই ম্যাচেই শমিতের অভিষেক হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে
আপনার মতামত লিখুন :