ফুটবল ম্যাচের সময়সীমা ৯০ মিনিট কেন, এর কোনো সোজাসাপ্টা উত্তর নেই। ইতিহাসবিদরা এই নির্দিষ্ট সময়ের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাননি।
ফুটবলের নিয়মকানুন ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের মতো করে ধাপে ধাপে তৈরি হয়নি। বরং এর পেছনের গল্পটি বেশ কৌতূহলপূর্ণ এবং অনুমাননির্ভর।
ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) প্রথম মহাসচিব এবেনেজার কব মর্লি ১৮৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ফুটবলের প্রথম স্বীকৃত নিয়মকানুন প্রকাশ করেন।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, তাতে ম্যাচের সময়সীমা বা একটি দলে কতজন খেলোয়াড় থাকবে, সে সম্পর্কে কোনো উল্লেখ ছিল না।

১৮৫০ ও ১৮৬০-এর দশকে ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ছিল ফুটবলের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিশ্বের প্রাচীনতম ক্লাব শেফিল্ড এফসি গঠিত হয় ১৮৫৭ সালের ২৪ অক্টোবর।
এই ক্লাব এক বছর পরই 'শেফিল্ড রুলস' নামে কিছু নিয়মকানুন প্রকাশ করে, কিন্তু সেখানেও ম্যাচের সময়সীমা বা খেলোয়াড়ের সংখ্যা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল না।
ফুটবল ইতিহাসবিদ অ্যাড্রিয়ান হার্ভি তার গবেষণাগ্রন্থ 'ফুটবল: দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ইয়ারস'-এ লিখেছেন, ১৮৫০-এর দশকের শেষ দিকে শেফিল্ডের ম্যাচগুলোতে প্রতি দলে ২০ জন করে খেলোয়াড় থাকত এবং খেলাটা চলত দুই ঘণ্টা পর্যন্ত।
হার্ভির ভাষ্যমতে, ১৮৬২ সালের দিকেও ম্যাচের সময়সীমা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না। কোথাও এক ঘণ্টা, কোথাও তিন ঘণ্টা পর্যন্ত চলেছে।

সে সময় শেফিল্ড শহরে প্রায় ১৫টির মতো ফুটবল ক্লাব ছিল বলে জানা যায়, এবং তারা মর্লি বা এফএ-এর নিয়মের চেয়ে 'শেফিল্ড রুলস'ই বেশি অনুসরণ করত।
ইতিহাসে প্রথম ৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচের খোঁজ পাওয়া যায় ১৮৬৬ সালের ৩১ মার্চ। লন্ডনের ব্যাটারসি পার্কে শেফিল্ড এফসি-এর বিপক্ষে সেই ম্যাচে খেলেছিল লন্ডনের ক্লাবগুলোর সম্মিলিত দল।
অ্যাড্রিয়ান হার্ভির বইয়ে উল্লেখ আছে, সে সময় ৯০ মিনিটে খেলা হওয়াটা যতটা না আলোচিত ছিল, লন্ডনের দর্শক ও খেলোয়াড়েরা তার চেয়েও বেশি মজা পেয়েছিলেন শেফিল্ডের খেলোয়াড়দের হাওয়ায় বল তোলার কৌশল দেখে।
শেফিল্ড এফসি-এর ওয়েবসাইট বলছে, ওই খেলা দেখে লন্ডনের দর্শক আর খেলোয়াড় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছেন।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, সম্ভবত শেফিল্ড থেকে লন্ডনে ট্রেন যাওয়া-আসার সময় মাথায় রেখেই ওই ম্যাচের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল। এরপর থেকেই এই ৯০ মিনিটের রীতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৮৭১ সালে এফএ কাপের প্রথম নিয়মেও তাই লেখা হয়, প্রতিটি ম্যাচের সময় হবে দেড় ঘণ্টা।
তবে যারা মনে করেন ৯০ মিনিটের এই সময়সীমা নিছকই কাকতালীয় নয়, তাদের জন্য ইংরেজ ইতিহাসবিদ ও গবেষক পিটার সেডন তার 'ফুটবল টক: দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ফোকলোর অব দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট গেম' বইয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ফুটবল ম্যাচের এই সময়সীমা সংখ্যার প্রতি এক ঐতিহাসিক আসক্তি থেকে এসেছে, যার শিকড় মধ্যযুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্যযুগ থেকেই সময়কে ৬০ মিনিটে ভাগ করে রাখার যে ধারা, তা থেকেই হয়তো এই ৯০ মিনিট এসেছে।

সেডনের মতে, আজকাল যেমন ১০০-কে একটা পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা মনে করা হয়, ছয়শ বছর আগে সে রকম ভাবা হতো '৬০' সংখ্যাটিকে। এমনকি তিনি টেনিসের অদ্ভুত স্কোরিং সিস্টেমের (১৫, ৩০, ৪০, গেম অর্থাৎ ৬০) ভিত্তিও খুঁজে পেয়েছেন সেখানেই।
তার মতে, টেনিসের ৪০ আসলে ছিল ৪৫, পরে তা '৪০' করা হয়। সেটাও এক অদ্ভুত কারণে: 'ফর্টি ফাইভ' বলতে বেশি সময় লাগে, 'ফর্টি' বলতে কম।
সেডন বলছেন, ১৫ মিনিটের ভাগ বা তার গুণিতকগুলোকে ঐতিহাসিকভাবে সব সময় 'গোছানো' মনে করা হয়েছে।" সেডনের এই যুক্তি একটি ফুটবল ম্যাচের সময় ৯০ মিনিট হওয়াটাকে বেশ যৌক্তিক করে তোলে।
কোচরাও তো খেলোয়াড়দের প্রায়ই বলেন, ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে রক্ষণ সামলাতে। মধ্যবিরতিও হয় ১৫ মিনিটের। ধারাভাষ্যকাররা যেমন উত্তেজনা বাড়াতে বলেন, ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট চলছে।
বিখ্যাত ফরাসি কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারও বলতেন, একজন কোচের দৃষ্টিকোণ থেকে, চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শেষ ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

 
                             
                                    




 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
       -20251031190935.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন