জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর তার সাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে চলেছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন ব্রেন্ডন টেইলর। তার ব্যাটিং নৈপুণ্য, নেতৃত্ব এবং অভিজ্ঞতার কারণে তিনি দলের জন্য অপরিহার্য ছিলেন।
সকল ফরম্যাট মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের হয়ে ৯,৯৩৮ রান নিয়ে তিনি দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৭টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করে তিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক।
২০১৯ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের তারকা ক্রিকেটার ব্রেন্ডন টেইলর এক ভারতীয় ব্যবসায়ীর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ভয়াবহ স্পট-ফিক্সিংয়ের জালে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনাটি টেলরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবনকে ওলটপালট করে দেয়।

ঘটনার সূত্রপাত: একটি লোভনীয় প্রস্তাব
২০১৯ সালের অক্টোবরে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী টেইলরকে জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট শুরু করার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতে আমন্ত্রণ জানান।
এই সফরের বিনিময়ে টেলরকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে প্রায় ছয় মাসের বেতন বকেয়া থাকায় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ায় টেইলর এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।
তিনি বলেন, দুশ্চিন্তা যে হয়নি, সেটি দাবি করব না। তবে সে সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে প্রায় ৬ মাসের বেতন পাইনি আমরা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারবে কি না—সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ ছিল। ফলে আমি ভারতে গেলাম, কথামতো আলোচনা হলো।

কোকেন এবং ব্ল্যাকমেইল
ভারতে আলোচনার পর শেষ রাতে ওই ব্যবসায়ী ও তার সহকর্মীরা টেইলরকে এক নৈশভোজে নিয়ে যান। সেখানেই ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
টেইলর জানান, আমরা মদ্যপান করছিলাম, এমন সময় আমাকে প্রকাশ্যে কোকেন নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেটা তারাও নিচ্ছিল। বোকার মতো রাজি হয়ে যাই আমি।
পরদিন সকালে ওই ব্যবসায়ীরা টেলরের হোটেল রুমে এসে তাকে কোকেন সেবনের একটি ভিডিও দেখায়। এরপর তারা টেইলরকে আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিং না করলে ভিডিওটি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
টেইলর বলেন, এই পরিস্থিতিতে নিজেকে অসহায় এবং ফাঁদে পড়া অনুভব করেন। আমি ফেঁসে যাই। আর আমার রুমে ছয়জনকে দেখে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা জাগে তখন।

টেইলরের অর্থ গ্রহণ
ওই সময় প্ররোচনাকারীরা টেইলরকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে জানায়, এটি স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য 'আগাম' এবং বাকিটা 'কাজ শেষে দেওয়া হবে'। টেইলর সেই টাকা গ্রহণ করেন শুধুমাত্র ভারত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য।
তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছিল এ ছাড়া উপায় ছিল না, কারণ 'না' বলতে পারতাম না। আমার শুধু মনে হয়েছিল, সে জায়গা থেকে বেরোতে হবে।
মানসিক ও শারীরিক প্রভাব
দেশে ফেরার পর এই ঘটনা টেইলরের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তিনি পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে পড়েন এবং তার একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
এমনকি মানসিক সুস্থতার জন্য তাকে এমিট্রিপটাইলিনের মতো কড়া ওষুধও দেওয়া হয়।

আইসিসিকে দেরিতে জানানো এবং পরিণতি
ওই ভারতীয় ব্যবসায়ী টেইলরকে ফিক্সিংয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। টেইলরের দাবি, তিনি এমন কাজ করেননি। তবে আইসিসিকে পুরো ঘটনা জানাতে তার চার মাস সময় লেগে যায়।
টেইলর বলেন, আমি জানি এটা একটু বেশি সময়। তবে আমার মনে হয়েছিল এভাবে আমি সবাইকে নিরাপদ রাখতে পারব, বিশেষ করে আমার পরিবারকে।
তিনি আশা করেছিলেন, নিরাপত্তার শঙ্কার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে আইসিসি তার দেরির কারণ বুঝতে পারবে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা তা বোঝেনি।

টেইলর নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, নিজের মূর্খতার ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে পারব না আমি। দুর্নীতিবিরোধী অনেক সেমিনারে ছিলাম আমি, আমরা জানি, এমন সময়েই রিপোর্ট করতে হয়।
এদিকে সাড়ে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন টেইলর। আগামী ৭ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডে তাকে ডাকা হয়েছে।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন