ক্রিকেট ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায়, ১০ আগস্ট ছিলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। যা ক্রিকেট প্রেমীদের মনে গভীর ছাপ রেখেছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আজকের দিনে ক্রিকেট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো।
ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ স্বপ্নের অবসান (১৯৯৭)
আজকের এদিনে ১৯৯৭ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের দলকে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪০০-এর বেশি রানের। মাত্র একদিনেরও কম সময়ে ৪৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ড মাত্র ১৮৬ রানে গুটিয়ে যায়।
ফিল্ডে ছিল হতাশার ছায়া, তবে যেভাবে তারা লড়াই করেছিল, তা দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার জেসন গিলেসপির ব্যতিক্রমী বোলিং পরিসংখ্যান নজরকাড়া ছিল সেদিন।
অর্জুনা রানাতুঙ্গার শেষ টেস্ট (২০০০)
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট কিংবদন্তি অর্জুনা রানাতুঙ্গা গড়ে তুলেছিলেন অসাধারণ ক্যারিয়ার। ১৮ বছর বয়সে দেশের প্রথম টেস্ট খেলার পর ২০০০ সালে তিনি তার শেষ ম্যাচ খেলেন।
৫,১০৫ রানের এই ব্যাটসম্যান শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে দুই দশক ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ জয় (১৯৮৯)
১৯৮৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম টেস্টে ইংল্যান্ডকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। ট্রেন্ট ব্রিজের ঐতিহাসিক মাঠে অস্ট্রেলিয়ার এই জয় ক্রিকেট বিশ্বে তাদের আধিপত্যের প্রমাণ রেখেছে।
টেস্টের প্রথম দিন থেকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিং জুটি মার্ক টেইলর এবং জেফ মার্শ-এর অনবদ্য পারফরম্যান্সের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৩০১ রান করে কোনো উইকেট না হারিয়ে। এটি ইংল্যান্ডের বোলারদের জন্য এক বড় ধাক্কা ছিল।
মার্শ ও টেইলর জুটি প্রথম উইকেটে ৩২৯ রানের এক বিশাল পার্টনারশিপ গড়েন, যা ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচের ইতিহাসে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড।
এই জুটি শুধু রানের পাহাড়ই গড়ে তোলেনি, বরং ইংল্যান্ডের বোলারদের মনোবলও ভেঙে দিয়েছে।
দলনেতা অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে ৬০২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের সিরিজ জয় (১৯৯৮)
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের প্রথম পাঁচ ম্যাচের সিরিজে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা শেষ হয় ১৯৯৮ সালে, যখন হেডিংলির মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে সিরিজ জিতেছে।
ড্যারেন গফের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটে ম্যাচ শেষ হয় এবং ইংল্যান্ডের প্রথম সিরিজ জয়ের আমেজ ফিরেছিল।
গলে রুদ্ধশ্বাস জয় পেল শ্রীলঙ্কা (২০১৪)
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টটি স্মরণীয় হয়ে থাকলো স্বাগতিকদের জন্য। গল টেস্টের প্রথম চার দিন ব্যাট হাতে রানের পসরা সাজালেও, ম্যাচের পঞ্চম দিনে নাটকীয়ভাবে জয় তুলে নিল শ্রীলঙ্কা।
সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তান দলকে ১০১ রানের লক্ষ্য দিয়ে ৭ উইকেটের এক রুদ্ধশ্বাস জয় পেল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের দল।
ম্যাচের প্রথম চার দিনে দুই দলই নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৫০ এর বেশি রান করে। কিন্তু পঞ্চম দিনে সব আলো কেড়ে নেন লঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ।
পাকিস্তানকে ব্যাট হাতে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে দেখে দিনের প্রথম সেশনেই আক্রমণ শুরু করেন তিনি। তার স্পিন ঘূর্ণিতে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮০ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। হেরাথ একাই তুলে নেন ৬টি উইকেট।
এরপর জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১০১ রান। কিন্তু ম্যাচের এই পর্যায়ে হানা দেয় প্রকৃতি। মাঠের উপর তখন বড় কালো মেঘের আনাগোনা। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা।
অন্যদিকে দিনের আলোও কমতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রানের গতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস তার ১৬ বলে অপরাজিত ২৫ রানের টর্নেডো ইনিংস দিয়ে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যান।
আজকের দিনটি ক্রিকেট ইতিহাসে একাধিক স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী। ২২ গজে ব্যাট ও বল হাতে সাফল্য, রেকর্ড এবং অবিশ্বাস্য মুহূর্তগুলো ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
আপনার মতামত লিখুন :