দেশের ক্রিকেটে ‘আশার ফুল’ খ্যাত মোহাম্মদ আশরাফুলকে যখন আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হলো তখন উচ্ছ্বসিত ছিলেন তার ভক্ত-সমর্থকরা।
কিন্তু সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই আসে আরেক খবর—দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যদিও তিনি আয়ারল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত থাকছেন। এই দুই ঘটনার সময়গত নৈকট্য এবং সিলেটের নেটে দুজনের সাম্প্রতিক আচরণ ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা।
সিলেটে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচের আগে নেটে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল যখন সৌজন্যমূলকভাবে সহকারী কোচ সালাউদ্দিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন, তখন কোচ সালাউদ্দিন যেন তা না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেলেন। মাঠে উপস্থিত অনেকের চোখেই ধরা পড়েছে এই দৃশ্য।
এই ঘটনা কি নিছকই ভুল বোঝাবুঝি, নাকি ড্রেসিংরুমের ভেতরের কোনো শীতল সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ? এই সিরিজে আশরাফুলকে নিয়োগ দেওয়ার পরপরই সালাউদ্দিনের পদত্যাগের ঘোষণা— অনেকেই এই দুই বিষয়কে এক সুতোয় গেঁথে দেখছেন।
গুঞ্জন উঠেছে, আশরাফুলের এই আগমন হয়তো মানতে পারছেন না দলের সিনিয়র সহকারী কোচ। যদিও সালাউদ্দিন বা আশরাফুল উভয়েই প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেননি, বরং আশরাফুল সালাউদ্দিনের সাথে তার সম্পর্ক ভালো বলেই জানিয়েছেন। তবে ক্রিকেট অঙ্গনে গুঞ্জন থামছে না।
এদিকে, টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অবশ্য আশরাফুলকে নিয়ে নিজেদের ‘খুবই এক্সাইটেড’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি আশরাফুলের অভিজ্ঞতা দলের কাজে দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন।
কিন্তু এরপরই তার কথায় আসে দ্বিধা। শান্ত বলেন, ‘তবে আমি যতদূর জানি তিনি এই সিরিজের জন্য এসেছেন। খুবই কঠিন, কতটুকু আসলে টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারবেন। আশা করি, তার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে দেবে।’
অধিনায়কের এই কথায় স্পষ্ট যে আশরাফুলের মেয়াদ স্বল্পকালীন এবং টেকনিক্যাল পরিবর্তন আনার মতো সময় তিনি পাবেন না। এতেই প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি আশরাফুলকে শুধুই ‘মেন্টর’ বা পর্যবেক্ষক হিসেবেই দেখছে টিম ম্যানেজমেন্ট?
অন্যদিকে, সালাউদ্দিনের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পরেও শান্তর কণ্ঠে তাকে রেখে দেওয়ার আবদার। সিনিয়র সহকারী কোচের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ (যেমন: নেটে শান্ত ও লিটনকে বেশি সময় দেওয়া) উড়িয়ে দিয়ে শান্ত আশা প্রকাশ করেন, বোর্ড সালাউদ্দিনের সঙ্গে ভালোভাবে বিষয়টির সমাধান করবে।
এই পরিস্থিতিতে আশরাফুলের সামনে রয়েছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এক সিরিজের অতিথি, যার টেকনিক্যাল বিষয়ে কাজ করার সুযোগ সীমিত, তাকেই এখন সক্রিয়ভাবে ড্রেসিংরুমের নতুন ভূমিকায় নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।



